মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। দিনের আলোয় মাঝ নদী থেকে এবং রাতের আঁধারে নদীর পাড় ঘেঁষে চলছে এই বেপরোয়া কর্মযজ্ঞ। প্রভাবশালী বালু খেকোদের এই তান্ডবে নদের পাড়ে দেীন হচ্ছে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দু-একজন শ্রমিককে আটক করলেও, বালু উত্তোলনের মূল হোতারা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর শহরের তাললুক এলাকা আড়িয়াল খাঁ নদের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে ড্রেজার। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলা মাঝ নদী থেকে বালু তোলা হলেও, রাত গভীর হলেই চক্রটি নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন শুরু করে। এতে নদী তীরের মাটি আলগা হয়ে যাওয়ায় ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই নদী তীরের বসতবাড়িও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।
বালু দস্যুদের ভয়ে তটস্থ এলাকাবাসী। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের ওপর নেমে আসে হামলা অথবা দেওয়া হয় মিথ্যা মামলা। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, জেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধনও করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান বা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে এটিকে ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে দেখছে উপজেলা প্রশাসন। মাদারীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সমন্বিত অভিযান চালালে স্থায়ীভাবে এটি বন্ধ করা সম্ভব।’
তবে বালু উত্তোলনের মূল হোতাদের বা সিন্ডিকেটের গডফাদারদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা। প্রশাসনের এমন নমনীয় ভুমিকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, এখনই এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে মাদারীপুরের মানচিত্র থেকে অনেক এলাকা হারিয়ে যাবে। এছাড়া অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিলুপ্তির পথে রয়েছে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।
আরও পড়ুন:








