বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খলিশাকান্দি গ্রামে মা ও দুই শিশুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন মোড়। নিহতের মা রাবেয়া সুলতানা বৃহস্পতিবার রাতে শাজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নিহত সাদিয়ার স্বামী সেনাসদস্য শাহাদাত হোসেন কাজল (২৭)কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২–৩ জনকেও আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে হত্যা মামলায় স্বামী সেনাসদস্য শাহাদাতকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খলিশাকান্দি দহপাড়ার বসতঘরের টিনসেট কক্ষে সাদিয়া মোস্তারিন (২২), তার ৩ বছরের মেয়ে সাইফা এবং ৭ মাসের ছেলে সাইফের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই শিশুর গলা কাটা এবং সাদিয়ার গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি এলাকায় চরম হতবাক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
ঘটনার পরপরই সেনাসদস্য স্বামী শাহাদাত হোসেন কাজলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। তিনি ময়মনসিংহ সেনানিবাসে কর্মরত এবং কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন।
গতকাল রাতে দায়ের করা মামলায় নিহত সাদিয়ার মা রাবেয়া সুলতানা অভিযোগ করেন, গত তিন বছর ধরে মেয়ের ওপর চরম নির্যাতন চালাচ্ছিল শাহাদাত। জমি বিক্রি করে টাকা আনা, মোটরসাইকেল কেনার জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করেন। এসব নিয়ে ঝগড়া প্রায়ই হতো। ঘটনার আগের দিন বিকালেও শাহাদাত ফোন করে টাকা দাবি করে এবং সাদিয়াকে মারধর করার কথা জানায়।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন—২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ২৫ নভেম্বর সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে যে কোনো সময়ে শাহাদাত ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দুই শিশুর গলা কেটে এবং সাদিয়ার গলায় চাপ প্রয়োগ করে হত্যা করে। পরে ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে সাজানোর চেষ্টা করা হয়।
পরিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত লাশ এবং বিছানার পাশে রক্তবিহীন একটি লোহার বটি দেখতে পায়—যা তাদের কাছে ‘পরিকল্পিত হত্যার আলামত’ বলে মনে হয়েছে।
অন্যদিকে শাহাদাতের মা দাবি করেন, সাদিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং পূর্বেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের দাবি—সাদিয়া দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরিবার এই বক্তব্য মানতে রাজি নয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দরজা ভেঙে তিনজনের মরদেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সবাই হতবাক হয়ে যায়। কেউ কোনো শব্দ শুনতে না পাওয়ায় বিষয়টি আরও রহস্যজনক হয়ে ওঠে।
শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, মা রাবেয়া সুলতানার দায়ের করা মামলাটি রুজু করা হয়েছে। ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা—এখনই নিশ্চিত নয়। স্বামী শাহাদাত হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তবে মামলা রুজুর পর সেনাসদস্যকে আসামি দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তাকে রিমান্ডে আনা হবে। তখন জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছু পরিষ্কার হবে।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে সাদিয়ার লাশ ভান্ডারপাইকা এবং দুই শিশুর লাশ খলিশাকান্দি গ্রামে দাফন করা হয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের পাশাপাশি ন্যায়বিচারের দাবিতে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন:








