রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

নানা অনিয়মে জড়িত বুল্লা আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১৬:৪৯

শেয়ার

নানা অনিয়মে জড়িত বুল্লা আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান
ছবি: বুল্লা আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুল্লা আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগপন্থী জিয়াউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, ভূয়া ভাউচার এবং অর্থ আত্মসাৎসহ ১৮টি গুরুতর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।

গত ১১ নভেম্বর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সরজমিনে এসে এডহক কমিটির উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক শুনানি গ্রহণ করেন। এর আগে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি আসবাবপত্র বিক্রি, ভূয়া সনদ ব্যবহার করে শিক্ষক নিয়োগ, সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর পক্ষে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রচারণা। হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি গোপন, অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ। এছাড়া সরকারি অনুদানের টাকা ও ভাউচার জালিয়াতি, ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রভাব ব্যবহার করে জিয়াউর রহমান বিদ্যালয়ে প্রায় ‘একনায়কতান্ত্রিক পরিবেশ’ তৈরি করেন।

২০২৩ সালে লাইব্রেরির নামে দেড় লাখ টাকার বই কেনার দাবি করা হলেও বাস্তবে সেই বইয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের টেবিল, চেয়ার, ফ্যানসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। এমনকি ঠিকাদারদের কাছ থেকে বাথরুম নির্মাণে ১ লাখ টাকার কাজের জন্য ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের টিভি মেরামতের কথা বলে প্রধান শিক্ষক সেটি নিজ বাসায় নিয়ে যান।

আব্দুল আহাদ নামে এক অভিযোগকারী জানান, ২০১৮ সালের দাড়িয়াপুর কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট ছাপানো এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, তিনি ২০২০ সালের পর বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ভাউচার, হাজিরা খাতা ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। মাত্র দুই বছরের (২০০৪–০৫ ও ২০২০–২১) খাতা উদ্ধার করা গেছে।

অভিযোগকারী জুবায়ের বলেন, লক্ষ লক্ষ টাকার ভাউচার অফিস থেকে গায়েব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার ও গরিব ছাত্রদের সহায়তার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিবাদ করায় আমাকে বারবার মামলার ভয় দেখানো হয়েছে।

এছাড়া ২০২৩ সালে অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে টানা ৮ মাস অনুপস্থিত থেকেও সরকারি বেতন তোলার অভিযোগ রয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জুলফিকার হোসেন সরজমিনে পরিদর্শনের সময় অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পান বলে জানা যায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, লাইব্রেরির বই, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার এবং কমন রুম মেরামতের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত তদন্ত চলছে। যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলাও চলমান।



banner close
banner close