রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বাংলা এডিশনে সংবাদ প্রকাশ; রাজস্ব সার্কেল নজরুলকে প্রাইস পোস্টিংয়ে বদলি

সাভার প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর, ২০২৫ ১৪:৪৯

শেয়ার

বাংলা এডিশনে সংবাদ প্রকাশ; রাজস্ব সার্কেল নজরুলকে প্রাইস পোস্টিংয়ে বদলি
ছবি: সংগৃহীত

আমিনবাজার রাজস্ব সার্কেলে বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতার প্রভাবে একচ্ছত্র দাপট, সিন্ডিকেট পরিচালনা, দালাল–ওমেদার চক্রের মাধ্যমে ঘুষবাণিজ্য এবং ভূমি–সেবায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ভূমি উপসহকারী (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোঃ নজরুল ইসলামকে অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলা এডিশনে রাজস্ব সার্কেলের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নজরুলকে গত ১১ নভেম্বর রাজস্ব ডেপুটি কালেক্টর তানজিলা আক্তারের স্বাক্ষরিত এক আদেশে ঢাকা জেলা প্রশাসন তাকে প্রাইস পোস্টিংয়ে বদলি দেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নজরুল ইসলাম দীর্ঘ সময় আমিনবাজার সার্কেলকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সাধারণ মানুষের নামজারি থেকে শুরু করে ভিপি লিজ, মিস কেস, ইটভাটা প্রতিবেদন—প্রায় সব সেবা নিতে গিয়েই “লাইন” নামের টাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ভূমি উন্নয়ন কর আদায়েও অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে, যার ফলে সরকার বছরের পর বছর বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সেবা–প্রত্যাশীরা হয়রানি ও ভোগান্তিতে জর্জরিত হলেও স্থানীয় দালাল–ওমেদার চক্র সারাদিন অফিস প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াত, আর এদের ছত্রছায়ায় চলতো ঘুষের মাধ্যমে ফাইল নিষ্পত্তির বিশেষ সুবিধা।

বিগত কয়েক বছরে স্থানীয় সাংবাদিকরা নজরুলের বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও প্রশাসনিক পর্যায়ে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মাঝে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কয়েকজন দালালকে শাস্তি দেওয়া হয়, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তারা নতুন পরিচয়ে বা রাজনৈতিক তকমা বদলে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। স্থানীয়দের দাবি, এখানকার দুর্নীতি যেন কখনোই থামার সুযোগ পায়নি।

এদিকে তৎকালীন এসিল্যান্ড বাসিত সাওয়ারের সময়ও আমিনবাজার ও ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলে অনিয়মের মাত্রা আরও বেড়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগগুলোর পরপরই তাকে ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলে প্রাইস পোস্টিং এবং পরে মুন্সিগঞ্জে বদলি করা হলেও, শুধু বদলি করলেই দুর্নীতি থেমে যাবে—এমন বিশ্বাস স্থানীয়দের নেই। তাদের মতে, সুনির্দিষ্ট তদন্ত না হলে এসব অনিয়মের মূল চিত্র কখনোই সামনে আসবে না।

কোন্ডার এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা রহিম চাচা জানান, নজরুলের বদলিতে মানুষ স্বস্তি পেলেও তার গড়ে তোলা সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে—এই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তার দাবি, ইউএনও, জেলা প্রশাসক এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে বিশেষ নজর দিতে হবে যেন একই চক্র আবার ফের শক্তি অর্জন না করতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূমি কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার বাইরে যারা সৎভাবে কাজ করেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলে আনার উদ্যোগ থাকতে হবে। একই বিতর্কিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বারবার ঢাকার বিভিন্ন সার্কেলে ঘুরে বেড়ালে দুর্নীতি কখনো কমবে না।

সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে নজরুল ইসলামকে আবারও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব সার্কেল তেজগাঁওয়ে বদলি। স্থানীয়দের প্রশ্ন—একজন দীর্ঘদিনের সমালোচিত কর্মকর্তা কীভাবে রাজধানীর অন্যতম কেন্দ্রীয় সার্কেলে পোস্টিং পেল? তারা বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও ভূমি উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

স্থানীয়রা মনে করছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ভূমি মন্ত্রণালয় যদি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করে, তবে নজরুল ইসলাম, বাসিত সাওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিস্তৃত নথি প্রকাশ পাবে। তাদের প্রত্যাশা, বদলি নয়—প্রকৃত সত্য বের করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণই হবে স্থায়ী সমাধান।



banner close
banner close