সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বাঁশখালীর শুঁটকি পল্লীতে ভরা মৌসুম; কর্মব্যস্ত সময় পার করছে সহস্রাধিক শ্রমিক

বাঁশখালী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০১

শেয়ার

বাঁশখালীর শুঁটকি পল্লীতে ভরা মৌসুম; কর্মব্যস্ত সময় পার করছে সহস্রাধিক শ্রমিক
ছবি: বাংলা এডিশন

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলীয় এলাকায় শুঁটকি উৎপাদনের ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সরল, ছনুয়া, নাপোড়া, শেখেরখীলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে বিশাল আকারের শুঁটকির মাঁচা তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক মাছ পরিষ্কার, ধোয়া ও মাঁচায় শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ সহস্রাধিক মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে এ শুঁটকি পল্লীগুলোর উপর।

ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত সাড়ে তিন মাসে বাঁশখালী থেকেই প্রায় ৭ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শুকানো শুঁটকি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়।

উপজেলার সবচেয়ে বড় শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্র হলো- সরলের কাহারঘোনা জালিয়াখালী নতুন বাজারের উত্তর-পশ্চিম এলাকা, শেখেরখীলের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা।

এ ছাড়া ছনুয়া, গন্ডামারা, পুঁইছড়ি, শীলকূপের মনকিচর, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও জলদকরখালের বিভিন্ন চরেও প্রায় অর্ধশত শুঁটকি মহাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনেকেই আবার ঘরোয়াভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে শুঁটকির কাজ করছে। স্থানীয় জেলেরা জানান, নিজেদের জন্য ঘরোয়াভাবেও সমুদ্রের মাছ শুকিয়ে শুঁটকি প্রস্তুত করেন তারা। প্রাকৃতিক তাপেই মাছ শুকানো হওয়ায় বাঁশখালীর শুঁটকি স্বাদে অনন্য ও বাজারে চাহিদাসম্পন্ন।

উপজেলার শেখেরখীল, বাংলাবাজার, জালিয়াখালীসহ বিভিন্ন ঘাট থেকে জেলেরা রূপচাঁদা, ছুরি, লইট্টা, ফাইস্যা, তেলাহাঙ্গর, পোহা, পাতামাছসহ নানা প্রজাতির কাঁচা মাছ পাইকারি দরে সংগ্রহ করেন।

নারী শ্রমিকরা প্রথমে মাছ পরিষ্কার করেন এবং পরে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বড় বড় বাঁশের মাঁচায় সাজিয়ে দেওয়া হয়। টানা তিন থেকে চার দিনের রোদে এগুলো শক্ত হয়ে বাজারজাতযোগ্য অবস্থায় পৌঁছায়। চিংড়ি, ভোল, মেদসহ আরও অনেক মাছও এখানকার মাচায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রস্তুতকৃত শুঁটকি যাচ্ছে চট্টগ্রাম, খুলনা, সৈয়দপুর, জামালপুরসহ সারা দেশের পাইকারি বাজারে।

সরলের কাহারঘোনা এলাকার শুঁটকি চাষী মোহাম্মদ হারুন 'বাংলা এডিশন' কে জানান, 'সাড়ে তিন মাসে আমার প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরিসহ সব খরচ বাদ দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা নীট লাভ হয়েছে। নারী-পুরুষ মিলিয়ে এখানে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন। পুরুষেরা ৭০০-৮০০ টাকা এবং নারীরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করি। সাগরে ৬৫ দিনের মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগ পর্যন্ত উৎপাদন চলতে থাকে।'

এলাকার শুটকি চাষী আলাউদ্দিন, মঞ্জুর, সরওয়ার জানান, 'আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়ত। শ্রমিকদের কষ্টও কম হতো। সরকারীভাবে ঋণ সহায়তা পেলে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।'

বাঁশখালী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তৌসিব উদ্দিন 'বাংলা এডিশন' কে বলেন, 'বাঁশখালীর শুঁটকি সারাদেশে জনপ্রিয়। এ পেশাকে আধুনিকায়ন করতে সরকার মৎস্যজীবীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে। শুঁটকিপল্লীগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে তাদের সীমাবদ্ধতা ও প্রয়োজনীয়তা যাচাই করব।'



banner close
banner close