বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

নাইক্ষ্যংছড়িতে আরকান আর্মির সদস্য গ্রেপ্তার

বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১৯:৫৩

শেয়ার

নাইক্ষ্যংছড়িতে আরকান আর্মির সদস্য গ্রেপ্তার
ছবি: বাংলা এডিশন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মিয়ানমার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির ( এএ) সদস্য সন্দেহে এক মিয়ানমার নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের হাতিমারাপাড়া পাহাড় এলাকা থেকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আরাকান আর্মির মাদক পাচার কাজে জড়িত সন্দেহে এ মিয়ানমার নাগরিককে আটক করেছে সোনাইছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল।

আটক ব্যক্তির নাম সুমিঅং তঞ্চঙ্গ্যা (২৫)। সোমবার (১৭ নভেম্বর) ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসরুরুল হকের দিক নির্দেশনায় পরিচালিত এ অভিযানে মিয়ানমার নাগরিক সুমিঅং তঞ্চঙ্গ্যা কে আটক করা হয়। তিনি মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের আখিয়াব জেলাধীন মংডু থানার কালারডেবা এলাকার অংছিপু তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে।

পুলিশ জানায়, সুমিঅং তঞ্চঙ্গ্যা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের কয়েকজন সহযোগীর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আরাকান আর্মির মাদক পাচার কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে তার প্রধান সহযোগী হিসেবে দুইজন স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা যুবকের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন-উপজেলাধীন ঘুমধুম ইউনিয়নের মংজয়পাড়া এলাকার বাসিন্দা পুনাউ তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে মংগ্যা তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) এবং অপরজন হলেন সোনাইছড়ি ইউনিয়নের হাতিমারা পাড়া এলাকার লংটু অং তঞ্চঙ্গ্যা ছেলে লাইক্য মং তঞ্চঙ্গ্যা(৩৫)।

জিজ্ঞাসাবাদে সুমিঅং আরও জানান, এসব সহযোগীদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫০-৩০০ কার্ট বার্মিজ ইয়াবা পাচারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।

তিনি আরও জানান, আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মাদক প্রবেশ করানোর সময় স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা ও মার্মা সম্প্রদায়ের মাদক পাচারকারীদের সশস্ত্র পাহারা দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়া মিয়ানমারের আরাকান আর্মি স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যা ও মার্মা যুবকদের মাদক পাচার কাজে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হতে প্রলুব্ধ ও উদ্বুদ্ধ করছে।

জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মিয়ানমার নাগরিক সুমিঅং তঞ্চঙ্গ্যা স্বীকার করেন যে, হাতিমারাপাড়া এলাকায় তার কাছে ১০ কার্ড ইয়াবা এবং নিরাপদে মাদক পাচার করার জন্য আরাকান আর্মির সরবরাহকৃত একটি অগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তার এই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ তাকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ি ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হলেও কোনো মাদকদ্রব্য বা অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এসময় তিনি জানান, পুলিশের তৎপরতার খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই উল্লেখিত তার সহযোগীরা ইয়াবা ও অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ওসি মাসরুরুল হক বলেন, আটক মিয়ানমার নাগরিকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তঃসীমান্ত মাদক চক্র সম্পর্কে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এলাকার কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি স্থানীয় যুবকদের মিয়ানমার বা আরাকান আর্মিতে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।



banner close
banner close