কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিরোধপূর্ণ জমির ৭০টি বড়বড় মেহগনি ও জাম গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে লাখ টাকা মূল্যের গাছ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। পরিপক্ব ৭০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৮১ হাজার টাকায়। এতে প্রতিটি গাছের দাম দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৯১ টাকা। লাখলাখ টাকা লুটপাটের জন্যই এত কম দামে গাছগুলো বিক্রি করেছেন সওজ রাজশাহী অপারেশন ডিভিশনের (পশ্চিমাঞ্চল) নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ।
এদিকে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর অফিস প্রাঙ্গণের প্রায় এক একর জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় ওই জমির বাগানের গাছ গুলো বিক্রি করা হয়েছে। গত শুক্রবার হুটহাট তোড়জোড় করে গাছ কাটা শুধু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। এসময় গণপূর্তের কর্মচারীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। পরে গত দুদিনে প্রায় অধিকাংশ কাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই গাছ ও জমি তাদের বলে দাবি করছে। তবে কুষ্টিয়া আদালতে মামলা চলমান রয়েছে৷ মামলা নিষ্পত্তির আগে আইন অমান্য করে গাছ বিক্রি ও কাটা আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা ও অপরাধ বলে মনে করছেন অনেকেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক সার্কেল কুষ্টিয়ার নতুন ভবন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে বিরোধপূর্ণ জমির বাগানের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। পরে নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ অপারেশন ডিভিশন রাজশাহী থেকে নিলাম দরপত্রের মাধ্যমে সেখানকার ৭০টি গাছ ১ লাখ ৮১ হাজার ৪০০ টাকায় ক্রয় করেছেন নওগাঁ এ এম কে ট্রেডার্স। এ এম কে ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী মেহেদী হাসান নওগাঁ মান্দা উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। সওজ রাজশাহী অপারেশন ডিভিশনের (পশ্চিমাঞ্চল) নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ ঠিকাদার মেহেদী সঙ্গে যোগসাজশ করে পানির দামে লাখ লাখ টাকার গাছ নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করেছে৷ অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারকে ঠকিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে মুকুট।
গণপূর্তের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, এই জমিতে গণপূর্ত গাছগুলো রোপণ করেছিল। রক্ষণাবেক্ষণও করেছে তারা৷ এই জমির নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। অথচ গণপূর্ত কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। সেসব গাছ কাটা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, গণপূর্তের এই জমির রেকর্ড সড়ক ও জনপথের নামেই রয়েছে। রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এরমধ্যেই গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে তারা। আমরা বলেছি রোববার সকল অফিস খোলা পর্যন্ত গাছ কাটা বন্ধ রাখতে। অথচ তারা গাছ গলো কেটে ফেলেছে।
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, এই জমির রেকর্ড সড়ক ও জনপথের নামে। আর গাছগুলো কাটা হচ্ছে নিলামের মাধ্যমে। এখানে কারও আপত্তি থাকার কথা না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মঞ্জুরুল করিম বলেন, জমি যার, জমির ওপর গাছও তার। এই জমির রেকর্ড সূত্রে মালিক সওজ। জমির খাজনাও দেয় সওজ। তাছাড়া মামলা থাকলেও গাছ না কাটার বিষয়ে নির্দেশনা নেই। এটা ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে। গাছ বিক্রির বিষয়টি রাজশাহী অপারেশন ডিভিশন অফিস জানেন। এখানে কুষ্টিয়া অফিসের কেউ সম্পৃক্ত না।
সচেতন মহলের মানুষ বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা মূল্যের গাছ বিক্রি করেছে সওজ কর্মকর্তা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সওজ রাজশাহী অপারেশন ডিভিশনের (পশ্চিমাঞ্চল) নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ পানির দামে গাছগুলো বিক্রি করেছে। সরকারকে ঠকিয়ে নিজে লাভবান হয়েছে মুকুট। মোটামোটা বড়বড় গাছ নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করেছে সে। বিষয়টি তদন্ত করে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে সওজ রাজশাহী অপারেশন ডিভিশনের (পশ্চিমাঞ্চল) নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ বলেন, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম দুর্নীতি করা হয়নি। নিয়ম মেনেই গাছ বিক্রি করা হয়েছে। মামলা নিষ্পাপ হয়েছে। রায় আমাদের পক্ষে হয়েছে। তবে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান হোসেন। তিনি জানান, ওই জমি নিয়ে সওজের সঙ্গে গণপূর্ত অফিসের বণ্টন মামলা রয়েছে। এখনো চলমান রয়েছে। এই জমিতে আগে একটি স্টে অর্ডার ছিল। স্টে স্থগিত হওয়ার পর আমরা আবার স্টে অর্ডারের জন্য আপিল করেছি। মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
আরও পড়ুন:








