মানবতাবিরোধী অপরাধে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আগামী সোমবার আদালতের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। বুধবার ও বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলার দুই থানায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ১৭৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে নাশকতার মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ থানায় এ মামলা করে। ইতোমধ্যে দুই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার মামলায় সাবেক পৌর মেয়র নাদের বখ্ত, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্ত পলিনসহ ৩৫ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। অন্যরা হলেন বখতিয়ারুল হক মাহি, নিহার রঞ্জন, মিনা দাশ, ফুয়াদ আহম্মেদ, শাহরিয়ার নুর নিহান, মেহেদী হাসান সাকিব, ফাহিম আহমেদ, মাহমুদুল হাসান পলাশ, আলী হোসেন, শিহাব নুর, মো. শাহারুল আলম, রিমন, বিশাল, তারেক, তাফসির, পলাশ, ইফতি বখ্ত, আশরাফুল ইসলাম রাহাত, শাহরিয়ার আহমদ সাগর, আসেফ বখ্ত রাদ, আশিকুর রহমান রিপন, হারুনুর রশিদ হারুন, মাসাকাওয়াত জামান ইনতি, মো. রাহাত আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদ শিহাব, ইমন, আলী হোসেন, রিংকু চৌধুরী, সানোয়ার, আবুল হাসনাত মো. কাওছার, বাবু, আফজাল ও রুহেল।
অন্যদিকে শান্তিগঞ্জ থানায় পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা এমএ কাশেম চৌধুরী, আতাউল হক সানী, রিফাত উদ্দিন ও হাবিব আহমদসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে ৪৫ জনকে আসামি করে নাশকতার মামলা হয়েছে।
বুধবার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর এলাকায় ঝটিকা মিছিল করে ২০-২৫ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা একমাত্র নারী ছিলেন পুরান লক্ষ্মণশ্রীর মিনা দাশ। মিছিল শেষে ঢাকা পালানোর সময় বাস কাউন্টার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত বাকি দুজন হলেন ছাত্রলীগের সুনামগঞ্জ পৌর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বখতিয়ারুল হক মাহি, জেলা শাখার সহসভাপতি নিহার রঞ্জন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে নাশকতার মামলা দায়ের করেছে।
অন্যদিকে বুধবার রাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব পাগলা এলাকায় অবস্থান নিয়ে গাড়ির টায়ার ও মশালে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আওয়ামী লীগের কর্মী। স্থানীয়দের ধারণা, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন ছিলেন। ঝটিকা মিছিলের খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপির লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ কাশেম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম নাঈম জানান, ওই দিন পাগলা বাজারে আমাদের দলীয় কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়েছে। দামোধরতপী-মাহমুদপুরে আমাদের কর্মী মিয়া সাইফুল, ইজাদসহ আরও অনেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তারা মিছিলকারীর অবস্থান টের পেয়ে আমাদের অবগত করেন। আমরা দুই দিক থেকে ধাওয়া দিই। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে সিএনজিযোগে নাশকতাকারীরা পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, তারা সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। তারা জ্বালাও-পোড়াও করলে কেন্দ্রের নির্দেশে তাদের প্রতিহত করব।
জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রাজু জানান, সুনামগঞ্জ শহরতলির ইকবালনগর, লালপুর ও আব্দুজ জহুর সেতুর শেষাংশে মিছিল করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে দলের নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুলের নেতৃত্বে তিনটি স্থানেই বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা পালিয়ে যায়।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন বলেন, নাশকতার মামলায় ইতোমধ্যেই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:








