চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শহরের পুতুল (২২) নামের এক কণ্ঠশিল্পীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগ থেকে বাঁচতে পুলিশকে ব্যবহার করে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফের বিরুদ্ধে।
ঘটনার সূত্র অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে দর্শনা পৌর এলাকার হঠাৎপাড়া নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ পুতুলকে গ্রেপ্তার করে। পরিবারের অভিযোগ, এ সময় পুতুলের বাড়ির তিনটি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয় এবং খাদ্যসামগ্রী মাটিতে ফেলে নষ্ট করা হয়। পুতুলকে পরে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়।
পুতুল দর্শনা গার্লস হাই স্কুল ও পূর্ব রামনগর স্কুলে গানের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। ছোটবেলা থেকেই গান শেখা পুতুল টেলিভিশন, বেতার ও মঞ্চে নিয়মিত গান করতেন। তার বাড়ি দর্শনা পৌর এলাকার আনোয়ারপুর (হঠাৎপাড়া) মহল্লায়। তার বাবা ছিলেন কেরু চিনিকলের শ্রমিক, যিনি বর্তমানে মৃত। চার ভাইবোনের মধ্যে পুতুল অন্যতম। তার বড় ভাই মিতুল এক সময় বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
পুতুলের অভিযোগ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। পরে বিয়ের কথা বললে নানা তালবাহানা শুরু করেন। এই বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলে পুলিশকে ব্যবহার করে একটি সাজানো মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়।
স্বর্ণ চোরাচালান মামলা: আসামির জবানবন্দিতে নাম
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, ২৯ সেপ্টেম্বর কামারপাড়া সীমান্ত থেকে ৩৫০.১২ গ্রাম ওজনের তিনটি স্বর্ণবারসহ আসমা খাতুন নামে এক নারীকে আটক করে বিজিবি। পরে আসমা ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পুতুলের নাম উল্লেখ করেন। এরপরই ৭ অক্টোবর পুতুলকে গ্রেপ্তার করে ৮ অক্টোবর আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং তিনি কারাগারে পাঠানো হন।
তবে বিজিবি ৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান বলেন, “আসমাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে বিজিবির কাছে কারও নাম বলেনি। এ বিষয়ে আমাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও কিছু উল্লেখ করা হয়নি।”
পুলিশের বক্তব্য ও বিতর্ক
দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর বলেন, “পুতুলের গ্রেপ্তারে আমি নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছি। তবে বাড়িতে কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।” গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি জানান, আসমা খাতুনের জবানবন্দি ৬ অক্টোবর থানায় পৌঁছে, এরপর ৭ অক্টোবর পুতুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে পুতুলের পরিবারের দাবি, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে পুলিশকে ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঞ্চল্য
ঘটনার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ইউটিউব অনুষ্ঠানে '১৫ মিনিটস' -এ সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর শরীফুজ্জামান শরীফ ও তার সহযোগী তরিকের নেতৃত্বে পুতুলের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তিনি দাবি করেন, পুলিশ ও বিচার বিভাগের একাংশ এতে জড়িত এবং ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, “আমি সারাদিন মহিলা দলের প্রোগ্রাম ও নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত ছিলাম। পুতুলের গ্রেপ্তার পুলিশের বিষয়।”
জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান বাবু বলেন, “আমি বিষয়টি আংশিক শুনেছি। আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাহলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।”
পুতুলের বড় ভাই মিতুল বলেন, “আমার বোন সাহসিকতার সঙ্গে সত্য কথা বলেছে। এই কারণেই তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”
চাঞ্চল্যকর মোড় ও তদন্তের দাবি
বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে তীব্র চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অনেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন:








