পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রকৃত জেলেদের চাল না দিয়ে স্বজনপ্রীতি, বিত্তবান ও জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত না এমন ব্যক্তিদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকৃত জেলেরা।
কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার এই ইউনিয়নের নয়শ জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তালিকাভূক্ত জেলেদের একদিন আগেই চাল নেওয়ার কার্ড সরবরাহ করা হয়।
কিন্তু তালিকাভুক্ত অনেক জেলেই চাল পায়নি। তাঁদের অভিযোগ, নিবন্ধিত জেলে না, এমন ব্যক্তিদের মাঝে চাল দেওয়া হয়েছে। যাঁরা অন্য পেশায় জড়িত।
চরকালাইয়া গ্রামের জেলে মো. এনামুল বলেন, ‘তিনি একজন প্রকৃত জেলে। নদীতে মাছ ধরে সংসার চালান। কিন্তু আমি চাল পাইনি।’
শৌলা গ্রামের মো.শাহাবুদ্দিন হাওলাদার (৬৩) বলেন, ‘শিশু বয়স থেকেই জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত। তিনি সরকারিভাবে নিবন্ধিত একজন জেলে। এই পেশার ওপর নির্ভরশীল তাঁর পরিবার। কিন্তু তাঁরা চাল পান না। ২১ দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় কোনো কিছু ভালো লাগে না।’
তিনি আরো বলেন, এই গ্রামে অন্তত আরও ২০ জন নিবন্ধিত জেলে আছে, যাঁরা কেউ চাল পান না।’
ওই গ্রামের নিবন্ধিত জেলে আবদুর রহমান (৪২), মো. ফিরোজ (৪০), আবদুল মন্নান (৪০), মো. জাফর হাওলাদার (৩৮) তারা সবাই বলেন, ‘আমরা জেলে হয়েও চাল পান না। অথচ ইউপি সদস্যদের কাছের লোকেরা চাল পায়। তাঁরা এই অনিয়মের বিচার কার কাছে দিবেন?’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ব কালাইয়া গ্রামের মো. হাবিবুল্লাহ (৪০), মো. নিজাম (৩৫) ও মো. জলিল হাওলাদার (৫০) নামের তিন ব্যক্তি অটোরিকশায় করে ২৫ কেজি করে মোট আটজনের ২০০ কেজি চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তাঁদের কেউ জেলে না। কিভাবে চাল পেলেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাঁরা চলে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালাইয়া বন্দরের কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন মিয়ার এক মেয়ে ঝুমুর আক্তারকে জেলেদের চাল দেওয়া হয়েছে। হারুন পেশায় একজন শ্রমিক। ওই পরিবারের কেউ জেলে পেশার সাথে জড়িত না।
একই এলাকার মো. মনির, মো. সালাম, আদর্শ গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী ছোট মনির জেলেদের নামের চাল পেয়েছেন। তাঁরা কেউ-ই জেলে না।
কালাইয়া এলাকার মো. শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ‘ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যাঁরা জেলে না হলেও আওয়ামী লীগের কর্মী এমন ব্যক্তিদের চাল দেওয়া হত। গত বছরের ৫ আগষ্টের পর ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক হলেও তাঁর দোসর ইউপি সদস্যরা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। তাঁরা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে সেই প্রথা এখনও চালু রেখেছেন। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কালাইয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ হাওলাদার বলেন, ‘তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁরাই চাল পেয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘জেলেদের চাল অন্য পেশার কেউ পাওয়ার সুযোগ নাই। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:








