রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের শেষ দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:৫৩

আপডেট: ৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:১৬

শেয়ার

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের শেষ দিন আজ
ছবি: বাংলা এডিশন

পাহাড়ি শহর বান্দরবান আজ ফানু‌সে র‌ঙ্গিন। চারদিকে আলো আর আনন্দের রঙ। আজ প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ উপ‌ল‌ক্ষ্যে সন্ধ্যা নামতেই রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার থেকে পূজা-বন্দনার উদ্দেশ্যে বের হয় বর্ণাঢ্য রথযাত্রা। শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ অংশ নেন এ ধর্মীয় আয়োজনে। ভক্তরা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হন, কেউ আবার রথ টেনে নেয়া হাতে অংশ নেন পুণ্যের আশায়।

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ভিক্ষু ও ভক্তরা একসাথে পালন করেন বিশেষ প্রার্থনা। বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে আলো জ্বালিয়ে মনে প্রাণে করেন পূজা। এই দিনটি আত্মশুদ্ধি, ক্ষমা ও নতুন করে জীবন শুরু করার প্রতীক বলে মনে করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদা‌য়ের তরুন তরুনীরা জানায়, মাহাঃ ওয়াগ্যায়াই পো‌য়ে: হল আত্মশুদ্ধির অনুষ্ঠান, অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দর‌কে বরণের উৎসব। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থে‌কে তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর আসে এ মাহাঃ ওয়াগ্যায়াই পো‌য়ে: (প্রবারণা পূর্ণিমা)। এ পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিজেকৃত অপরাধ বা পাপ স্বীকার করে পরিশুদ্ধ হয়। প্রতিবছরই প্রবারণাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি পল্লীগু‌লো‌তে চলে উৎসবের মাতম। র‌বিবার (৫অক্টোবর) সন্ধ্যায় মাহাঃ ওয়াগ্যায়াই পো‌য়ে: পালন উপলক্ষে পুরাতন রাজবাড়ী থে‌কে রথযাত্রা শুরু হয়ে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার ও উজানীপাড়া মহা বৌদ্ধ বিহার প্রদক্ষিণ করে একই স্থা‌নে এসে শেষ হয়। সোমবার সন্ধ্যায়ও একই ভাবে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

মারমা তরুনী থুইমে প্রু মারমা জানায়, প্রবারণা পূ‌র্ণিমার সময় রাত নামতেই আকাশ ভরে ওঠে রঙিন ফানুসে। শত শত ফানুস উড়ে আলোকিত করে পাহাড়ি রাত। এই আলোকছটা যেন অন্ধকারকে পেছনে ফেলে শান্তি আর ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র।

আরেক মারমা তরুনী লি‌পি প্রু জানান, আমরা প্রবারণা উপল‌ক্ষ্যে ফানুস বা‌তি আকা‌শে উড়াই। এছাড়া রথ টানা, পিঠা উৎসব, ছোয়াইং দান, ক‌্যয়ং এ গি‌য়ে প্রার্থনা ক‌রি। আমরা ম‌নে ক‌রি এ দিন‌টি খুবই প‌বিত্র। আমরা আমা‌দের জীবন‌কে অতী‌তের সকল পাপাচার মোছন ক‌রে নতুন ভা‌বে এগি‌য়ে নি‌য়ে যাই।

উচনু মারমা জানায়, এ প্রবারণা পূ‌র্ণিমা‌তে বিহারে বিহারে চলে ধর্মীয় দেশনা ও জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা। বিহারগুলো‌তে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী ও পুরুষরা নি‌জে‌দের এবং জগ‌তের সকল প্রাণীর সুখ: শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থ‌্যতার জন্য প্রার্থনায় জড়ো হয়।

বৌদ্ধ ভিক্ষু সত‌্যজিৎ জানায়, দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধুপকাঠি ও হাজারো প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের খাবার) প্রদান করে দিনটি উদযাপন করে।

প্রবারণা পূর্ণিমা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি পাহাড়ের মানুষের মিলনমেলা, আনন্দ আর ভালোবাসার এক অপূর্ব উৎসব। ফানুসের আলো যেমন ছড়িয়ে পড়ে আকাশজুড়ে, তেমনি প্রার্থনার আলো ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি হৃদয়ে- এ প্রার্থনায় সাঙ্গু নদীতে রথ বির্জসনের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে মারমাদের প্রবারণা উৎসবের।



banner close
banner close