শনিবার

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ৪০০ বছরের প্রাচীন চাঁদগাজী ভূঁঞা জামে মসজিদ বিলুপ্তির পথে

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:৪৮

শেয়ার

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ৪০০ বছরের প্রাচীন চাঁদগাজী ভূঁঞা জামে মসজিদ বিলুপ্তির পথে
ছবি: বাংলা এডিশন

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়া গোধা গ্রামে অবস্থিত ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো ঐতিহাসিক চাঁদগাজী ভূঁঞা জামে মসজিদ আজ অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসের মুখে। নিয়মিত নামাজ আদায় হলেও সংস্কারের অভাবে হারাচ্ছে এর ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের জৌলুস প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত ঘোষণার তিন দশক পরেও নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর উদ্যোগ ফলে দেয়াল ও গম্বুজে শ্যাওলা জমে কালো হয়ে গেছে

কালের সাক্ষী এই মসজিদটির দেয়ালজুড়ে বাংলার বারো ভূঁঞাদের অন্যতম ও মোগল আমলের প্রখ্যাত জমিদার চাঁদগাজী ভূঁঞা মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের প্রধান ফটকের উপরে কালো কষ্টি পাথরে খোদাই করা রয়েছে এর নির্মাণকাল ১১২ হিজরি স্থানীয় বংশধর জামসেদ আলমের দাবি, তৎকালীন প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী এক হাজার অঙ্কটি বাদ দেয়া হতো, তাই প্রকৃত নির্মাণকাল ১১১২ হিজরি (প্রায় ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ)

চুন, সুড়কি ও ক্ষুদ্র ইট দিয়ে নির্মিত প্রায় ২৮ শতক জায়গার ওপর দাঁড়ানো এই স্থাপনাটি ৪৮ ফুট দীর্ঘ, ২৪ ফুট প্রশস্ত ও ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চার ফুট পুরু দেয়ালবিশিষ্ট মসজিদের ছাদে রয়েছে তিনটি গম্বুজ, যার মাঝেরটি তুলনামূলকভাবে বড় প্রতিটি গম্বুজের উপরে পাতা ও কলস আকৃতির অলঙ্করণ এবং চারপাশে ১২টি ক্ষুদ্র মিনার মসজিদটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। ভেতর-বাইরের দেয়ালে ফুল ও পাতার টেরাকোটার নকশা মোগল স্থাপত্যের নিপুণ কারুকার্যের প্রমাণ বহন করে।

১৯৮৭ সালে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গেজেটভুক্ত হয় এবং ১৯৯২ সালে আংশিক সংস্কার করা হয় এরপর ১৯৯৪ সালে সামান্য কিছু কাজের পর দীর্ঘদিন আর কোনো সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে মসজিদের গম্বুজ, ছাদ ও দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, এবং শেওলায় ঢেকে গেছে স্থাপত্যের সৌন্দর্য সীমানা প্রাচীর না থাকায় রক্ষণাবেক্ষণ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

চাঁদগাজী ভূঁঞার বংশধর জামসেদ আলম বলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই এই ঐতিহাসিক মসজিদটি দেখতে আসেন কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা সরকারের কাছে মসজিদ ও সংলগ্ন সড়ক দ্রুত সংস্কার এবং একজন ইমাম ও মুয়াজ্জিন নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬৩৫ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে চাঁদগাজী ভূঁঞা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন এবং নিজের নামে মসজিদ, বাজার ও কাছারি বাড়ি নির্মাণসহ বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাঁর কবর এখনো সংরক্ষিত আছে।

স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারের যথাযথ উদ্যোগ নিলে এই মসজিদটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিকশিত হতে পারে।



banner close
banner close