শনিবার

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ নাটকের আড়ালে নাশকতা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:৪৪

আপডেট: ৪ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:১০

শেয়ার

খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ নাটকের আড়ালে নাশকতা
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণ নাটকের আড়ালে নাশকতা

খাগড়াছড়িতে কথিত ধর্ষণ অভিযোগের অন্তরালে ইউপিডিএফের তাণ্ডব এমন অভিযোগ তুলছে প্রশাসন সেনাবাহিনী। ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়া হয়েছিল এমন অভিযোগ এখন জোরালো হচ্ছে। কী ঘটেছিল সিঙ্গিনালায়? কেন উত্তপ্ত হলো পাহাড়? দেখুন আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন।

২৩ সেপ্টেম্বর রাতে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এক পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি।

২৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় আন্দোলন। জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে বের করা হয় বিক্ষোভ মিছিল পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর ডাক দেয়া হয় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের।

এদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন কথিত ধর্ষণের শিকার পাহাড়ি কিশোরীর পিতা। মামলা দায়েরের পরপরই শয়ন শীল নামে অভিযুক্ত এক তরুণকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।

তবুও চলতে থাকে আন্দোলনের নামে অস্থিতিসীলতা সৃষ্টির চেষ্টা। ২৬ সেপ্টেম্বর শহরের চেঙ্গী স্কয়ারে নারী নিপীড়নবিরোধী সমাবেশ থেকে সেনাবাহিনীর একটি টহল গাড়িতে হামলা চালায় আন্দোলনে মিশে থাকা ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। এতে আহত হয় অন্তত তিনজন সেনা সদস্য। আহত হয়েও সংঘাত এড়াতে সেনা সদস্যরা নিরবে ওই এলাকা ত্যাগ করেন।

২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে এবার জেলার সবকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

দুপুরে জেলা শহরের নায়ানখাইয়া এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ বাঁধে। একপর্যায়ে স্বনির্ভর বাজারে বেছে বেছে হামলা চালানো হয় বাঙালি হিন্দু মুসলিমদের ১৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। লুট করা হয় প্রায় কোটি টাকার মালামাল নগদ অর্থ

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুপুরে জারি হয় ১৪৪ ধারা। কিন্তু এর আগেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। পাহাড়ি যুবকদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের দৃশ্য ধরা পড়ে। হামলা হয় ব্যাংক, হোটেল রেস্তোরাঁয়।

বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলার পর সাউন্ড গ্রেনেড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাতভর নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হয় পুরো খাগড়াছড়ি শহর।

গেল ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জড়ো হতে থাকে ইউপিডিএফ সমর্থিত অবরোধকারীরা। বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করলে স্থানীয়দের সঙ্গে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।

একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদ থেকে ছোঁড়া হয় প্রাণঘাতী গুলি আগুন দেয়া হয় বাজারের আশপাশের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সহিংসতায় প্রাণ যায় তিনজনের, আহত হন ১৩ সেনা সদস্যসহ বহু মানুষ।

এরই মধ্যে আলোচিত ধর্ষণ মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট ফাঁস হয় ৩০ সেপ্টেম্বর। ফাঁস হওয়া ওই ফরেনসিক প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি ধর্ষণের কোনো আলামত

অন্যদিকে, যে সময় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল সেই সময় অভিযুক্ত শয়ন শীলকে দেখা গেছে খাগড়াছড়ি বাজারের একটি জুয়েলারি দোকানে। সিসিটিভি ফুটেজেই মিলেছে এর প্রমাণ।

খাগড়াছড়ি গুইমারায় কয়েক দিনের সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত তিনজন। আহত হয়েছেন সেনা, পুলিশ, সাংবাদিক সাধারণ মানুষ মিলিয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক।

সেনাবাহিনী বলছে, ঘটনার পেছনে ইউপিডিএফের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। আর স্থানীয়রা বলছেন, ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে পাহাড়ে অশান্তি ছড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য।

এদিকে খাগড়াছড়ি গুইমারায় ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

ধর্ষণের ফরেনসিক রিপোর্ট আর অভিযুক্ত তরুণের ঘটনার সময় বাজারে অবস্থানের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের পর তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল। এখন জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।

ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=4H8xmLWhla4



banner close
banner close