খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালায় এক পাহাড়ি তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় লাগাতার অবরোধ, প্রাণহানি আর সহিংস আন্দোলনে কদিন ধরেই উত্তাল পাহাড়।
এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে আলোচিত এই ধর্ষণের ফরেসসিক প্রতিবেদন। ওই ফরেনসিক প্রতিবেদনে ধর্ষণের কোনো আলামত পায়নি মেডিকেল বোর্ড।
তবে ফাঁস হওয়া ফরেনসিক প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পরদিনই চয়ন শীল নামের এক তরুণকে আটক করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। তাকে আদালতে তোলা হলে ৬ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়।
এদিকে আমাদের হাতে আসা একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তাতে ঘটনার যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে সেই সময় গ্রেফতার হওয়া তরুণ খাগড়াছড়ি বাজারে একটি জুয়েলারি দোকানে অবস্থান করছিলেন।
ফাঁস হওয়া এই ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং সিসিটিভি ফুটেজ এই ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এ তথ্য জানান খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যারা নিহত ও আহত হয়েছেন আমরা তাঁদের পাশে থাকব, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যারা চিকিৎসাধীন আছেন, তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্বও আমরা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অবরোধকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। তাদের আট দফা দাবির মধ্যে সাতটি বিষয় আমরা এড্রেস করেছি। আমরা বলেছি অবরোধ তুলে নিলে তবে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে।’
মঙ্গলবার গুইমারার রামসু বাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ও ঘরবাড়ি ঘুরে দেখেন জেলা প্রশাসক। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনেন তিনি। জেলা প্রশাসকের সফরে সঙ্গে ছিলেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা।
পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘গুইমারার সহিংসতায় যারা হতাহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারকে মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।’
এ ছাড়াও সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি ও গুইমারা রিজিয়নের কমান্ডাররা আলাদা করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সকালে খাগড়াছড়ি রিজিয়নে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ। তিনি অভিযোগ করেন, খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এর প্রভাব পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় পড়তে পারে। এটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। সামনে দেশের বড় কিছু বিষয় রয়েছে, সেগুলো বানচালের জন্য ইউপিডিএফ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রথমে শহরে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে গুইমারায় সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়। ওই সময় তিনজন নিহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজনও আহত হন। এর দায় ইউপিডিএফের।’
একইদিন বিকেলে সেনাবাহিনী গুইমারা রিজিয়নে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবুল কালাম শামসুদ্দিন রানা। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি ও গুইমারাতে ঘটে যাওয়া সহিংসতা কোনো সাধারণ ঘটনা হয়। এটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং বৃহৎ ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এর বিষয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে। পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ইউপিডিএফসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো দায়ী।’
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি জেলা। এরপর দফায় দফায় সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’। অবরোধকে ঘিরে পাহাড়ি-বাঙালি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত গুইমারা উপজেলায় তিনজন মারমা তরুণ নিহত এবং খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং গুইমারা উপজেলায় সেনাবাহিনী-পুলিশ ও সাংবাদিকসহ আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক।
আরও পড়ুন:








