রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

ঝালকাঠি-০২ আসনে মাঠ ছাড়তে নারাজ বিএনপির ডজন খানেক মনোনয়ন প্রত্যাশী

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৯:২৪

শেয়ার

ঝালকাঠি-০২ আসনে মাঠ ছাড়তে নারাজ বিএনপির ডজন খানেক মনোনয়ন প্রত্যাশী
ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝালকাঠি-০২ আসন গঠিত।

এ আসনেই বরাবরই বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকের ভোট বেশি। তবে সময়ের পালাবদলে ভোটের চাকা ঘুরারও ইতিহাস রয়েছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, আওয়ামীলীগ সব দল থেকেই এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবুও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিএনপির ধানের শীষ প্রতিকেরই জনপ্রিয়তা বেশি রয়েছে বলে কয়েকবার জনগণের ভোটেও তা প্রমাণিত হয়েছে।

তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দুর্গে আঘাত হানতে প্রস্তুতি নিয়েছে ইসলামী জোটবদ্ধ দলগুলো। তাই বিএনপির ভোটব্যাংক খ্যাত এ জনপদে এই একক আধিপত্য থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান জনসাধারণ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা দলগুলো সমন্বয় করে প্রার্থী দেবে এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে চারিদিকে। ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে ভোটের মাঠে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ডজন খানেক নেতা। বিপরীতে জামায়াত দিয়েছে একক প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে লড়ার জন্য মনোনয়ন দেওয়া হবে ইসলামী অন্য দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার পর।

এরপর তুলনা করা যাবে কার চেয়ে কে বেশি জনপ্রিয়তায় শক্তিশালী ও ভোটের মাঠে প্রভাব কার বেশি থাকবে। ইতিমধ্যে প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে ২৮জুন ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ঝালকাঠি থেকে লঞ্চ রিজার্ভ করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে অংগ্রহণ করেছে জেলা শাখা।

গত ১৯জুলাই ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে জামায়াতের মহাসমাবেশে ঝালকাঠি জেলা থেকে ৮হাজার নেতাকর্মী নিয়ে লঞ্চযোগে অংশগ্রহণ করেছে।

ঝালকাঠি-২ (সদর উপজেলা ও নলছিটি) ঝালকাঠি সদর উপজেলা ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত আটজন।

তাদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থী জীবা আমিনা আল গাজী, সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, বিএনপির চেয়ারপার্সোন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুল ইসলাম নূপুর এবং জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা জিএম আব্দুস সবুর কামরুল জোর প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অগ্রভাবে অংশ নিচ্ছেন তারা।

জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি জুলফিকার আলী ভুট্টোর মরণোত্তর উপনির্বাচনে স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেনভুট্টো ২০০০সালে ধানের শীষ প্রতিকে নির্বাচনে করলেও তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু নৌকা প্রতিক নিয়ে ভোট কারচুপিতে জয়ী হন।

এরপর ২০০১সালের চারদলীয় ঐক্য জোটের নির্বাচনে বিজয়ী হন ইলেনভুট্টো। তারই ধারাবাহিকতা ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পান ইলেন ভুট্টো।

তিনি সে যাত্রায় পার হতে না পারলেও এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮সালেও দলের টিকিট পান তিনি। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপির টিকিট দেওয়া হয় জীবা আমিনার হাতে আওয়ামীলীগ সরকারের শেষের দিকে রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হলেও সভা-সমাবেশে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিলো তাকে। যথাযথ মর্যাদায় তার আসনটিও দেয়া হয়নি।

রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ, ইলেন ভুট্টো ২০১৮ সালের

নির্বাচনের পরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি। এরপর তাকে কেউ খুঁজে পায়নি। আওয়ামী শাসনামলে তার নামে হয়নি কোনো মামলা।

জীবা আমিনা বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনী প্রচারে নামায় বাড়িতে হামলা, পথে পথে সন্ত্রাসী হামলায় গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপর বিভিন্নভাবে হামলা-মামলা দিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করে ফ্যাসিবাদী সরকার। এতকিছুর পর নেতাকর্মীদের আগলে রাখার চেষ্টা করেছি। এবার দল তার প্রতিদান দেবে বলে প্রত্যাশা।

বিএনপির চেয়ারপার্সোন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বব্যাংকে চাকুরী পাই।

বিশ্বব্যাংকের চাকুরী ছেড়ে দেশে আসছি জনসেবা করতে। ভালো কাজ করলে তার মূল্যায়ন অবশ্যই পাওয়া যাবে। এজন্য মনোনয়ন দৌড়ে আমি বিশ্বাম করি না। ভালোকাজের গুরুত্ব দিয়ে যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তুত।

মাহবুবুল হক নান্নু ছাত্রদল মনোনীত বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ভিপি, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি, বিএনপির বর্তমান সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদের দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত দিনে রাজধানী ঢাকাসহ ঝালকাঠির আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। তিনি একাধিকবার কারাবরণও করেন। নির্বাচনের মাঠে লড়ার ইচ্ছা তার বহু আগের, বেশ কয়েকবার তিনি দলের মনোনয়নও চান। এবারও তিনি আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।

২০২০ সালে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। দলের দুঃসময়ে তিনি জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছেন। তার নামে একাধিক মামলাও হয়েছে। তার বাসায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে ভাংচুর চালায়।

দলের আরেক ত্যাগী নেতা মনিরুল ইসলাম নুপুরও মনোনয়ন পাওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাহিদার আলোকে রাজনীতি করছি। এবার দল আমাকে টিকিট দেবে বলে আশা রাখি।

জিএম আব্দুস সবুর কামরুল জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছাত্রদলের গুরুত্বপুর্ণ পদে ছিলাম। জেলা যুবদল সভাপতি ছিলাম। কেন্দ্রীয় যুবদলের সম্পাদকীয় পদে এখনও দায়িত্বে আছি। ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন সংগ্রামে জেলায় ও কেন্দ্রে সবসময় অগ্রভাগে ছিলাম। এজন্য অনেক হামলা ও মামলা সহ্য করতে হয়েছে। একাধিকবার কারাবরণ করেছি। ছাত্রজীবন থেকেই শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতি শুরু করে এখন পর্যন্ত একইভাবে আছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ সবসময়ই রেখেছি, যা এখনও বহাল আছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে তার অবমূল্যায়ন হবে না, বরং বিজয় নিশ্চিত বলেও আশা করেন তিনি।

এদিকে বার বার কারা নির্যাতিত ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ব্যারিস্টার এম জি জাকারিয়াও এবার বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। গত ১৫ বছরে তার নামে আওয়ামী লীগ ৪৫টি মামলা দিয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

এআসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে শেখ নেয়ামুল করীমকে। যিনি বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রসংসদের এজিএস এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক ছিলেন।

তিনি ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তার পক্ষ হয়ে জামায়াত শিবিরের লোকজনও প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ করছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ধর্মীয় উৎসবে পোস্টারে শুভেচ্ছা বাণি ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজীকে ঘোষণা করেছেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। ডা. সিরাজী ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ধর্মীয় আলোচক নবমুসলিম ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজী গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কুশল বিনিময় করেেছন এবং খোজখবর নিচ্ছেন। ঝালকাঠির ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করে তাকে সমন্বিত মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচন করার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

ঝালকাঠি শহরের সাধারণ ভোটাররা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। ভোটাররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। তবে এবারের নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে তরুণ ভোটাররা। দেশ যেন আবার নতুন ফ্যাসিবাদের কবলে না পড়ে সে বিষয়ে সবাই বেশ সচেতন। গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদীতন্ত্র সবই দেখা হয়েছে। এবার সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন হলে কেমন চলবে সেটা দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান তারা।

তরুণ ভোটাররা বলেন, ‘তরুণরা এবার যেদিকে ঝুঁকবে নির্বাচনে শেষ হাসি তারাই হাসবে। এই প্রথম স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে এটাই পরম তৃপ্তির হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন’র ঝালকাঠি জেলা সভাপতি ইলিয়াস সিকদার ফরহাদ বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে তারা নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন। আবার যদি চাঁদাবাজ, দখলদার, দুর্নীতিগ্রস্ত ও টেন্ডারবাজরা ক্ষমতায় আসে, তাহলে জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্খার বাংলাদেশ নাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।



banner close
banner close