ক্যামেরার চোখে ট্রিলডাপ। ক্যামেরার কামরায় ধরাপরে সীমান্ত নদী মহানন্দার সচ্ছ জলধারা, নদীর বালুচরে শরতের কাশফুল, মহানন্দার ধারে ধারে সবুজ চায়ের কচি পাতায় ভোরের শিশির, বিস্তির্ণ সবুজ বনায়ন, নীল কালো রঙের দার্জিলিং পাহাড়- স্পষ্ট দেখা যায় পাহারের ঘরবাড়ি, অতঃপর কাঞ্চণজঙ্ঘা এরপর সুবিশাল নীলাকাশ। সৃষ্টিকর্তার অর্পূব ও স্বর্গীয় সৃষ্টি শ্বেতশুভ্র বিরাট হিমবাহী কাঞ্চণজঙ্ঘা যেনো শরতের কাশফুলের কোমল ছোঁয়া।বছরের এই সময়টিতে (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) বাংলাদেশের সংসদীয় এক নং আসন পঞ্চগড়-এক এর জনপ্রিয় এবং সবুজ উপজেলা তেঁতুলিয়ায় প্রাণ ও প্রকৃতি যেনো সাজে আপন মহিমায়। শীতের আগমণী বার্তা জানান দেয় ভোরের কুয়াশায়। শরতের কাশফুল যেনো সাদা মেঘের ভেলার মত নদীর মুক্ত বাতাসে দোল খায়। এ সময় পঞ্চগড়ের নদী গুলোতে থাকে পানি, উত্তরের পাহাড়ের বরফ গলে আসা ঝর্ণার পানি ছন্দে ছন্দে বয়ে যায় তেঁতুলিয়ার ভুস্বর্গে।
ভোর রাত থেকে মৃদু কুয়াশার চাপে নেমে যায় বাযূমন্ডলের ধূলিকণা। উত্তরের আকাশে ধুলিকণার অনুপস্থিতে আকাশ পরিস্কার হয়ে যায়। মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসে ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাওম’। নামাজ শেষে সুরা হাশরের তিন আয়াত পড়তে পড়তে বাংলাদেশের আকাশ সীমানায় সূর্যোদয়ের লাল আভা চোখে পড়ে। দুই-একটা পাখি ডেকে উঠে সৃষ্টিকর্তার প্রসংশায় ।
ইতিমধ্যেই সূর্যের তির্যক রশ্মি ছুয়েছে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরফ শৃঙ্গ কাঞ্চণজঙ্ঘার চুড়া। প্রথম আলোতে বরফের চুড়া সিদুরের মত লাল হয়ে ত্রিকোণমিতি সূত্রে রিফ্লেকশন দেয় পথিকের চোখে। যে কৃষাণীর ঘরে বাইরে তখনো সূর্যের রশ্মি পৌচ্ছায় নি সেও জানতে পরেছে সূর্য উঠে গেছে। চারদিকে গাছ ফুল পাখিদের প্রকৃতি বন্দনা। কাঞ্চণজঙ্ঘার সিদুর শুভ্রতায় মোহনীয় সৌন্দর্য তেঁতুলিয়ার মাতৃভূমিকে উর্বর করে দিয়ে ধীরে ধীরে। সূর্যের আলোয় খোলস ছড়িয়ে মেলে ধরে হিমবাহীর রুপাঞ্জলী কাঞ্চণজঙ্ঘা। প্রকৃতি ও পাহাড় প্রেমী মানুষের কাছে একচিলতে মুচকি হাসির মাঝে ধরা দেয় কাঞ্চণজঙ্ঘার মহিমান্বিত রুপ।
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে ১৮৪২ সালের আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পৃথিবীর সৰ্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে ধারণা।
কাঞ্চনজঙ্ঘা শব্দটি শুনে তৎসম কাঞ্চন+জঙ্ঘা মনে হলেও আসলে নামটি সম্ভবত স্থানীয় শব্দ ‘কাং চেং জেং গা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ তেনজিং নোরগে তার বই, ম্যান অফ এভারেস্ট -এ লিখেছেন ‘তুষারের পাঁচ ধনদৌলত’। এটির পাঁচ চূড়া আছে তাদের চারটির উচ্চতা ৮, ৪৫০ মিটারের ওপরে। এ ধনদৌলত ঈশ্বরের পাঁচ ভান্ডারের প্রতিনিধিত্ব করে, স্বর্ণ, রূপা, রত্ন, শস্য, এবং পবিত্র পুস্তক।
দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলের সাথে তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোর তুলনা করা যেতে পারে। যেভাবে টাইগার হিলের ভোর রাত থেকেই পর্যটকরা সূর্যোদয়ের জন্য প্রবল আকাংখার মত অপেক্ষা করতে থাকে ঠিক তেমনি তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত উৎসুক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা কাঞ্চণজঙ্ঘার মোহনীয় সৌন্দর্য দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। পার্থক্য– টাইগার হিলের ঘটনাটি ভারতের দার্জিলিংয়ে আর কাঞ্চণজঙ্ঘার ঘটনাটি বাংলাদেশের তেঁতুলিয়াতে। ভারতের পর্যটকরা সূর্যোদয়ের পাশিাপাশি খুব কাছ থেকে কাঞ্চণজঙ্ঘা দেখতে পারে আর বাংলাদেশের পর্যটকরা কাঞ্চণজঙ্ঘা দেখতে পারে। একিই সূর্যের আলোয় পর্যটকরা দেখতে পায় দুটি ভিন্ন দেশ থেকে একিই সৌন্দর্য ।
শুধু কি সকাল বেলার কাঞ্চণজঙ্ঘা? না, আকাশ পরিস্কার থাকলে সূর্যাস্থের সময়ও দেখা পাওয়া যায় জাদুকরী কাঞ্চণজঙ্ঘা। কাঞ্চণজঙ্ঘাকে জাদুকরী বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিষ্কার আকাশের প্রয়োজনীয়তাকে বুঝায়। আকাশ অথবা বায়ুমন্ডল পরিস্কার থাকলে সারাবছর কাঞ্চণজঙ্ঘা দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয় পরিবেশবিদরা। কিন্তু মেঘ অথবা ঘনকুয়াশার সাথে কোন সুত্র নেই । হিমালয়ের কঠিন শীলায় শীতের তীব্র কুয়াশায় ভরা মেঘে কাঞ্চণজঙ্ঘা খুজা নেহাত বোকামি। অতএব শীতের তীব্রতা বাড়ার পূর্বেই কাঞ্চণজঙ্ঘা দেখতে পাবার সুযোগ রয়েছে। কুয়াশা ও মেঘের জাদুরকাঠিতে কাঞ্চণজঙ্ঘা মাঝে মাঝে জাদুকরী আচরণ করে ধৌত ভ্রমনকারীদের সাথে। সঠিক পরিকল্পনা ও সময় থাকলে দুই-চার দিন অবস্থান করে পূর্নাঙ্গ চলচিত্র দেখে ফিরে যেতে পারেন নিজ গন্তব্যে । প্রেক্ষাগৃহের কোন দোষ নাই। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলে যেমন কৃষির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় তেমনি পর্যটন খাতেও বিরাট প্রভাব ফেলে ।
এক ঢিলে তিন পাখি, কাঞ্চণজঙ্ঘা দিচ্ছে ডাঁকি। নেপালের কাঞ্চণজঙ্ঘা দেখতে এসে সীমান্ত উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে বাংলাদেশের বৈচিত্র রুপ ও ভারতের সৌন্দর্যও উপভোগ করার দারুন সুযোগ।
ইদানীং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে দেখা যায় অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী, পর্যটক , সংবাদকর্মী , উদ্যোক্তা – এমনকি ব্যবহারকারীদের অনেকেই কাঞ্চণজঙঙ্ঘার ছবি, ভিডিও নিজ নিজ প্রোফাইলে ছড়িয়ে দিয়ে তেঁতুলিয়ার সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছেন , পরিব্রাজকদের মাঝে। প্রবল আগ্রহ তৈরী হয়েছে পর্যটকদের মাঝে। দিনে দিনে বাড়ছে টুরিষ্টদের চাপ। চাপ সামলাতে বাড়তি সর্তকর্তা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় আবাসন ও খাবার ব্যবসায়ীরা সাজিয়েছে নিজেদের মত করে ম্যানু। থাকছে ভিন্নতা। ছাড় অথবা সুবিধার ডিসকাউন্ট। সেচ্ছাসেবীরা তৈরী করছে নিজেদের। সামলাতে হবে চাপ। ট্যুরিষ্ট গাইডরা প্রশিক্ষিত হচ্ছে নিজ নিজ করিডোরে।
ধীরে ধরে দেশ ও দেশের বাইরের পর্যটরা তেঁতুলিয়াকে নতুন রূপে দেখছে এবং ভাবছে । কাঞ্চণজঙ্ঘা তেঁতুলিয়ার পর্যটনের সম্ভবনার জন্য একটি ট্রাম কার্ড । যার মাধ্যমে তেঁতুলিয়ার অনান্য স্পটগুলো দৃশ্যমান হবে এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তেঁতুলিয়ায় সৌন্দর্য এবং বৈচিত্রতায় সমতল চায়ের পাশাপাশি কৃষি ভিত্তিক পর্যটন সম্ভবনা গড়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি গ্রাম ভিত্তিক সহজ জীবন ও সমাজ বাস্তবতার সরলীকরণ জীবিকা নির্বাহ দেখতে আসতে পারে পর্যটকরা। সচ্ছ নদীর পানির দেশী মাছ, আঞ্চলিক জনপ্রিয় ফুড ম্যনু সংস্কৃতি, যার উপকরণ মাত্রা।
আরও পড়ুন:








