কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন বিভাগের জমিতে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ দোকান ও বাজার। এসব বাজারে ভিড়ের কারণে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও গোপন তৎপরতার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে দিন দিন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে বাজারগুলো টিকে আছে। যদিও ক্যাম্প প্রশাসন নিয়মিত অভিযানের কথা বলেন, কিন্তু কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতারাই এই বাজারের হর্তাকর্তা। পিছনে কেন্দ্রীয় নেতারা অদৃশ্য থাকলেও প্রকাশ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়েই পরিচালনা করছে এই বাজার। এসব বাজারের জন্য তারা দখল করে রেখেছে বন বিভাগের শত শত একর বনভূমি।
বিশেষ করে পালংখালী ইউনিয়নের ১৩ ও ১৯ নম্বর ক্যাম্পে এসব বাজারগুলোর মধ্যে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। পতিত আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলেও এই ক্যাম্পকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট দাপুটে চালিয়ে যাচ্ছে বনবিভাগের জমির উপর বাজার–দোকান ভাড়া কার্যক্রম, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বে–আইনি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এই বাজারের পিছনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নাম পাওয়া গেলেও শেল্টারদাতা হিসেবে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনি এখন পালিয়ে গেলেও বর্তমানে দেখাশোনা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আলম, শ্রমিক লীগ নেতা আলমগীর, যুবলীগ নেতা সরওয়ার ও ছাত্রলীগ নেতা নিশান মিজান। এসব বাজার তারা নিজেদের নামেই নামকরণ করেছেন। নেই কোনো অনুমতি, নেই কোনো বৈধতা।
শুধু তাই নয়, ছিনতাইকারী, ডাকাত দল ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় এই অবৈধ বাজারের টাকায়। পাশাপাশি এই টাকার উপর ভর করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা রাসেল ও মিজান বাহিনী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে ওই আওয়ামী সিন্ডিকেট।
এসব অবৈধ বাজারের আয়কৃত অর্থ সব অবৈধ কার্যক্রমে ব্যবহার হলেও বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ও কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না থাকায় স্থানীয় সরকার ও উপজেলা পরিষদকে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ও কর ফাঁকি দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট।
অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে, এসব বাজারে ক্যাম্পের সিআইসিও জড়িত। ক্যাম্প প্রশাসন নিয়মিত মাসোহারা নেয় এই বাজার থেকে। এসব অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বাজার করতে কাগজে কলমে লিখিত অনুমতি না দিলেও অদৃশ্যভাবে মৌখিক অনুমতি দেন ক্যাম্প প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি।
এদিকে বনবিভাগ উখিয়া রেঞ্জের পক্ষ থেকে ৩০-৪০ জনের একটি তালিকা ক্যাম্প প্রশাসনকে জমা দিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, বনবিভাগের জায়গার উপর অবৈধভাবে যে স্থাপনা ও অনুমতিবিহীন বাজার গড়ে উঠেছে, সব অভিযান করে উচ্ছেদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ক্যাম্প প্রশাসনকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্প প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অভিযান চালানো হবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্যাম্পের ভিতর সব বাজার অবৈধ, কাউকে বাজার বসাতে অনুমতি দেয়া হয়নি। এসব বাজার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে।
আরও পড়ুন:








