স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়কে উন্নয়নকাজের কথা বলে গর্ত করে সড়কটি ৯ মাস ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে জমছে পানি, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যান চলাচল। এবড়োখেবড়ো সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ এই সড়কটি বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ। শতশত গাড়ি চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। ভেঙে কোথাও খানাখন্দ। কোথাও ছোট বড় গর্ত। এমন সড়কের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা।
সড়কটির অবস্থান পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের সওদাগর থেকে রহমানিয়া মাদ্রাসা।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর গত ডিসেম্বরে বারবাকিয়া সওদাগর হাট থেকে রহমানিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত সড়কের টেন্ডার আহ্বান করলে মেসার্স ছৈয়দ আহমদ উজ্জল ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। কাজ পাওয়ার পর ঠিকাদারের লোকজন সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু করতে বরাদ্ধকৃত সড়কের পুরাতন কংক্রিট তুলে পেলের। বাজার অংশে আরসিসি ডালাই কাজ শেষ করেন। এরই মাঝে কাজের মালামাল রেখে ঠিকাদারের লোকজন চলে যান। তারপর থেকে গত ৯মাস ধরে উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় খানা-খন্দে ভরপুর সড়কের এমন নাজুক অবস্থার কারণে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় জনবহুল সওদাগর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্কুল আর মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়া বন্ধ রেখেছে। যার কারণে কোটি কোটি টাকার যেমন ক্ষতির সম্মোখিন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা তেমনি অনেক শিক্ষার্থী স্কুল মাদ্রাসায় আসা বন্ধ রাখায় অনেকে ঝরে পড়ছে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে। এমনকি সড়ক দিয়ে আসার সময় গর্ভবতী এক নারী সড়কেই সন্তান গর্ভপাত করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সড়কে চলাচলকারী টমটম চালক আব্বাস, সিএনজি চালক শওকত ও ডাম্পার চালক ছাদেক জানান, এ সড়কটি আগে মোটামুটি ভাল ছিল। গাড়ি চলাচল করতে পারতো। কয়েকমাস আগে
সড়কটির উন্নয়ন কাজের কথা বলে গর্ত করে ঠিকাদারের লোকজন চলে যায়। যার কারণে এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ বলতে চলে। যা কিছু গাড়ি চলে তা দুর্ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। সড়কটির কাজ দ্রুত শুরু না করলে বৃহত্তর বাজারটির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
বারবাকিয়া সওদাগর হাটের ব্যবসায়ী আনিসর রহমান জানান, সড়ক নাজুক অবস্থা থাকায়, ক্রেতা সাধারণ আসতে না পারায় বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মোখিন হচ্ছে। দ্রুত সড়কের কাজ শেষ না করলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
সাব-মেরিন নৌঘাঁটি প্রকল্পের চায়না কোম্পানীর ঠিকাদার ও ব্রীক ফিল্ট ব্যবসায়ী শাহাদাত কবির জানান,
সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হলে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ অদ্যবধি শুরু না করার কারণে খানা-খন্দে সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। দ্রুত সড়কটির কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাস্টার মোঃ ইউনুস জানান, সড়কের নাজুক অবস্থার কথাটি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শুরু করার তাগাদা দিলেও অদ্যবধি কাজ শুরু না হওয়ায় যান চলাচলতো দূরের কথা শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে।
পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন বলেন, ঠিকাদার অনিয়ম আর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কাজটি বন্ধ রেখেছে। সড়কের এত বেশি খারাপ অবস্থা বিগত কয়েক মাস আগে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় এক নারীর গর্ভপাত পর্যন্ত হয়ে যায়। দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদী জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বারবাকিয়া ইউনিয়ন উন্নয়নে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। বহু চেষ্টার পর ওই সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার কাজ না করে চলে যাওয়ায় জনসাধারণ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। আরো বেশ কয়েকটি সড়ক একই অবস্থায় পড়ে আছে। ওই কাজগুলো শুরু না করলে সড়কগুলো দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী সৌরভ দাশ জানান, আমি নতুন এসেছি। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি বৃষ্টির জন্য ঠিকাদার কাজটি শুরু করতে সময় চেয়েছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরু না করলে অন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:








