কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিচারক, সহকর্মী ও সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনদের দিকে তেড়ে যাওয়ার ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছেন সহকর্মীদের কাছে ‘বদমেজাজি’ হিসেবে পরিচিত এই আইনজীবী।
গত ২ সেপ্টেম্বর জেলার সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের পক্ষে জামিন শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ফখরুল। আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে ব্যর্থতা ঢাকতে আদালত প্রাঙ্গনে উপস্থিত সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনদের ওপর চড়াও হন তিনি। বিভিন্ন সময় বিচারকদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তা বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকদের ওপর অ্যাডভোকেট ফখরুলের চড়াও হওয়ার বেশ কিছু ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও স্যোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। এ ঘটনায় জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি। তিনি বর্তমানে ফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। জেলা আইনজীবী সমিতির আসন্ন দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
হেরে গেলেই তেড়ে যান ফখরুল:
আদালতের কর্মচারী ও আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম নিজেকে দাপুটে আইনজীবী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন। তিনি বেশ ‘বদমেজাজি’। প্রতিপক্ষ আইনজীবীদের সাথে তো বটে, যে কোনও মামলার শুনানিতে নিজের পছন্দ মতো আদেশ না পেলে বিচারকদের ওপর চড়াও হওয়াসহ এজলাস ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে ফখরুলের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্ত আসামি সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের জামিন শুনানিতে তার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নেন ফখরুল। এসময় তিনি প্রতিপক্ষের আইনজীবীসহ মামলার বাদী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। এজলাস কক্ষে বিচারকের সামনেই আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেন।
আদালত সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে ফের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এই আইনজীবী। জামিন করাতে না করার ব্যর্থতায় সাংবাদিকদের ওপর নেমে আসে তার ক্ষোভ।
আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকরা আসামি সুলতানা পারভীনকে কারাগারে নেওয়ার সময়কার ভিডিও ও ছবি নেওয়ার চেষ্টা করলে ক্ষেপে যান ফখরুল। সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনদের তিনি হুমকি ও ধমকানো শুরু করেন। ক্যামেরা কেড়ে নিতে তেড়ে যান। এমন ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম সেসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ এই ক্যামেরা নামাও। এটা আদালত, এটা খেলার মাঠ নয়। এই ক্যামেরা অফ করো। সীমা ক্রস করা যাবে না। আমাদেরকে মুখোমুখি দাড় করাবেন না।’
আগেও বিচারক, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ফখরুল:
২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হওয়ার দৌড়ে নিজ জুনিয়রের কাছে হেরে যান ফখরুল। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ১৯ নভেম্বর দুপুরে ফখরুলের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা নতুন পিপি বজলুর রশিদের সেরেস্তা ভাঙচুর করেন। উত্তেজিত ফখরুল প্রকাশ্যে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজও করেন।
একই দিন তিনি একজন নারী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথেও দুর্ব্যবহার করেন বলে সে সময় অভিযোগ করেন পিপি। এসব ঘটনার নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে স্থানীয় সাংবাদিক রিগানকে ফোনে হুমকি দেন ফখরুল।
জেলা বারের একাধিক আইনজীবীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিনুল হকের সাথে দুর্ব্যবহার করে এজালাসে ভাঙচুর চালান অ্যাডভোকেট ফখরুল। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। বেশ কয়েকদিন পলাতক থাকতে বাধ্য হন। পরে ক্ষমা চেয়ে পার পান।
তারও আগে ২০০৫ সালে সিনিয়র সহকারী জজ ইউসুফ আলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও খাস কামড়া ভাঙচুরের অভিযোগে ফখরুলের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে মামলা হয়। মামলায় চার্জ গঠন হয়। পরে ‘তদবির করে’ সেই মামলা থেকেও রেহাই পান এই আইনজীবী। এছাড়াও নিজের পছন্দ মতো আদেশ না পাওয়ায় আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিলন পালে সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপির রাজনৈতিক আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠা এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা বারের কোনও আইনজীবী। কেউ প্রতিবাদ করলে ফখরুল নিজ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তাদের ওপর তেড়ে যান।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম মন্তব্য করতে রাজি না হয়ে নির্বাচনের অযুহাতে কল কেটে দেন।
আরও পড়ুন:








