রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বিএনপি করার অপরাধে ১০ বছরের বেতন বন্ধ কলেজ শিক্ষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৪:১৫

শেয়ার

বিএনপি করার অপরাধে ১০ বছরের বেতন বন্ধ কলেজ শিক্ষকের
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার ইদ্রিছ মোল্লা ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক জনাব নিহার বিন্দু বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব শিক্ষকরা নির্যাতিত ছিলেন তাদের একজন তিনি । প্রায় ১০ বছরের অধিক সময় তিনি কোনো বেতনভাতা পাননি। কেবলমাত্র বিএনপি করার অপরাধে তাকে চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে বেতন বন্ধ করে বরখাস্ত করা তৎকালীন অধ্যক্ষ মধুসূদন সরকার নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গভর্নিং বডিকে ম্যানেজ করে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে অভিযোগ করেন এ শিক্ষক।

তথ্য অনুযায়ী, নিহার বিন্দু বিশ্বাস এক জুন ২০০১ সালে উক্ত কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৮-০৯ সেশনে শিক্ষাছুটিসহ কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনুমতি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল কোর্সে ভর্তি হন। কিছু মাস অতিবাহিত হওয়ার পর, ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় অন্যায় আচরণ।

নিহার বিন্দু বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, তিনি ওই সময় সরাসরি অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তখন অধ্যক্ষ সাফ জানিয়ে দেন, ‘আপনি বিএনপি করেন, এখন তো বেতন বন্ধ করলাম, এরপর আরও হবে। আপনি কলেজে ঢুকতে পারবেন না।’ এরপরও শিক্ষক নিহার নানা জায়গায় যোগাযোগ করেন, বিচার চান, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

তার জীবনে নেমে আসে চরম দুঃসময়। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের জল চেপে, ছেলের স্কুল ফি জোগাতে হিমশিম খেয়ে অসহায় এক যাত্রা শুরু হয় তার। উচ্চশিক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। অবশেষে ২০১৩ সালে তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়।

তখন শুরু হয় আইনি লড়াই। ১৮ নভেম্বর ২০১৩ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তিনি। দীর্ঘ শুনানি শেষে, ৩০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে হাইকোর্ট তাকে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে যাবতীয় বেতনভাতা সহ স্বপদে পুনর্বহালের আদেশ দেন।

এই রায়ের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ মধুসূদন সরকার আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। তবে সাত ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল খারিজ করে দেন।

এরপর বহু কাগজপত্র সংগ্রহ করে, মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পত্র নিয়ে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে, অবশেষে সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে তিনি পুনঃরায় স্বপদে যোগদান করেন। তারপর থেকে নিয়মিত বেতনভাতা উত্তোলনসহ সকল সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। কিন্তু তার জীবনের ১০ বছর অর্থাভাবে পার হওয়ায় তিনি একরকম নিঃস্ব হয়ে পড়েন। বাপ-দাদার ভিটেমাটিও বিক্রি করতে হয় তাকে।

পুনরায় যোগদানের পর বকেয়া বেতনভাতার জন্য তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বরাবর আবেদন করেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক চিঠিতে দেখা যায় ১৫ বছর পর্যন্ত বকেয় বেতন পরিশোধ করার ক্ষমতা মাউশিকে দিলেও তারা বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে তার দাবিকে সমর্থন জানিয়ে ফাইলটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। সেখানে কয়েকবার সাক্ষাৎকারে ডাকা হয় তাকে। প্রত্যেকবারই তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি হিন্দু মানুষ, বিএনপি করেন কেনো?’ এছাড়াও নানা ভর্ৎসনার শিকার হন তিনি।

এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে হাইকোর্টের রায় থাকার পরও, আইনের তোয়াক্কা না করে কত শিক্ষককে এভাবে নিপীড়িত করা হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।

এ বিষয়ে ইদ্রিছ মোল্লা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জনাব এনায়েত হোসেনকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন নিহার বিন্দু বিশ্বাসের বিষয়টি আমি জানি।কিন্তু তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না।তবে চেষ্টা করবো নিহার বিন্দু বিশ্বাস যাতে তার পাওনা টাকা পেতে পারে সে ব্যাপারে বকেয়ার ফাইলটি নতুন করে আঞ্চলিক অফিসে অগ্রগামী করবো।



banner close
banner close