রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

কুড়িগ্রামে কৃষককে আ. লীগের নেতা বানিয়ে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৩:৫৮

শেয়ার

কুড়িগ্রামে কৃষককে আ. লীগের নেতা বানিয়ে গ্রেপ্তার
কৃষককে আ. লীগের নেতা বানিয়ে গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদরের শিবেরডাঙ্গী এলাকার আবু বক্কর নামের এক কৃষককে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়ে মামলা ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে রাজীবপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে পুলিশ আবু বক্করের ছেলে রাসেল মিয়াকে ওয়ারেন্ট মামলায় গ্রেপ্তার করতে তার বাড়িতে যায়। এসময় রাসেলের বাবাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আবু বক্করকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়ে মামলা দেয় পুলিশ।

রাসেল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ এসে তাকে ডাকতে থাকে। পরে পুলিশ বাড়ির ভেতরে ঢুকে তাকে হাতকড়া পরায়। এরপর ঘর থেকে বের হওয়া তার বাবাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবাকে কেন ধরা হলো জানতে চাইলে পুলিশ দাবি করে, তার বাবা আবু বক্করের বিরুদ্ধেও ওয়ারেন্ট হয়েছে। তবে, যে মামলার ওয়ারেন্টের কথা বলেছে পুলিশ সেই মামলায় ইতোমধ্যেই তারা খালাস পেয়েছেন বলে জানান রাসেল। পুলিশের কাছে খালাসের কাগজপত্র দেখাতে চাইলে তা না দেখে তাকে থানায় নিয়ে যায়। এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়ে অন্য মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।

সোমবার আদালতে তোলা হলে রাসেল জামিন পেলেও তার বাবা আবু বক্করকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বিচারক। নিয়ে পরিবার এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

২০১৩ সালে জামায়াতের রাজীবপুর উপজেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আবু বক্করকে পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামি করে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠান। তবে, স্থানীয়রা এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠিক সম্পাদক পদেও রয়েছি। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকায় সব কমিটি আমার মাধ্যমে হয়েছে। কোথাও আবু বক্করের নাম নেই। তিনি কখনো কোনো মিছিল বা কর্মসূচিতেও অংশ নেননি। একজন কৃষককে ষড়যন্ত্র করে সাংগঠনিক সম্পাদক বানানো হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ছক্কুও একই মন্তব্য করেন। তিনি জানান, “শিবেরডাঙ্গীর কৃষক আবু বক্কর আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে নেই। তাকে দলের পদধারী বানিয়ে মামলায় জড়ানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

স্থানীয়রা জানান, প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও তাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। বরং একজন সাধারণ কৃষককে রাজনৈতিক পদে বসিয়ে রাজনৈতিক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

অন্যদিকে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফও দাবি করেছেন, তিনি আবু বক্কর নামে কাউকে চিনেন না। অথচ তাদের দায়ের করা মামলায় তাকে আসামি বানানো হয়েছে।

বিষয়ে ওসি শরিফুল ইসলাম দাবি করেন, গ্রেপ্তার হওয়া আবু বক্কর নতুন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

তবে, প্রস্তাবিত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ওই পদে রয়েছেন জহির মন্ডলপাড়া গ্রামের আরেক আবু বক্কর, যার নাম মোবাইল নম্বরও সেই কমিটিতে যুক্ত আছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, “তার নাম আমরা চার্জশিট থেকে কেটে দেবো।কিন্তু মামলার এজহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে যে, তদন্ত করে আবু বক্করকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকার সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।

এদিকে, বাংলা এডিশনের প্রতিবেদক যোগাযোগ করে আওয়ামিলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সেই সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্করের সাথে। তিনি প্রশাসনের ভয়ে অস্বীকার করেন তিনি উপজেলা আওয়ামিলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নন। অথচ রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামিলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে তার নাম নাম্বার যুক্ত করা রয়েছে।

মঙ্গলবার কৃষক আবু বক্করের পরিবার নিজ বাড়িতে এক প্রতিবাদ সংবাদ সম্মেলন করে। তারা অভিযোগ করে বলেন, আবু বক্কর কোনো রাজনৈতিক দলের পদে নেই। ষড়যন্ত্র করে পুলিশ তাকে আওয়ামী লীগের নেতা বানিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। পরিবার দাবি দ্রুত তাকে মুক্তি দেয়া হোক এবং এই মিথ্যা মামলা যারা দিয়েছে তাদের শাস্তি দাবিও করেছে আবু বক্করের পরিবার।

ঘটনায় এলাকাবাসী স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকে বলছেন, একজন কৃষককে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বলি বানানো হয়েছে, যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।



banner close
banner close