ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কাউসার আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
দপ্তরি বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া কাউসার অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি শুরু করলেও গত ১৬ বছরে ক্ষমতাসীন ডিসিদের আশীর্বাদে একের পর এক প্রমোশন পেয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এ সময় তিনি প্রশাসনকে ব্যবহার করে আত্মীয়–স্বজনকে সরকারি চাকরিতে ঢুকিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাঁর ভাই, বোন, বোনজামাতা, ভাগ্নে–ভাগ্নি, এমনকি বাসার কাজের লোক পর্যন্ত সরকারি চাকরি পেয়েছে তাঁর হাত ধরে। শুধু ২০২২ সালের নিয়োগেই সাত আত্মীয় চাকরি পান। নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁস, বদলি বাণিজ্য ও নির্বাচনী প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গেও জড়িত তিনি।
এদিকে, কাউসারের অবৈধ সম্পদের হিসাবও চমকপ্রদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, জমি, প্লট, কুমিল্লায় তিনতলা ভবনসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর নামে রয়েছে। স্ত্রীর কাছেও রয়েছে প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার।
কাউসারের অবৈধ সম্পত্তি:
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অভিজাত দাতিয়ারার বন্ধন টাওয়ারে তাঁর একটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। শেখ হাসিনা সড়কে রয়েছে ৮ শতাংশ জমি, আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। শহরের স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন এক ভবনে রয়েছে আরও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যার মূল্য প্রায় ৮৫ লাখ টাকা। এছাড়া যাদুঘর মৌজায় তাঁর ৮ শতাংশ খালি জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি টাকা।
ডিসি প্রজেক্টের (সমবায় প্রকল্প) আওতায় নিজ প্রভাব খাটিয়ে তিনি আরও ৮ শতাংশ প্লট বরাদ্দ নেন। সেই প্লটের আনুমানিক মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। নিজ জেলা কুমিল্লায় ভাই সোলায়মানের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন তিনতলা একটি ভবন, যাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীর কাছে রয়েছে প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার।
অভিযোগ রয়েছে, কাউসার কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিসি অফিসে প্রায় এক যুগ ধরে ১২ জন ক্যাজুয়েল কর্মী বিনা বেতনে কাজ করলেও কাউসারের প্রভাবে তাঁদের স্থায়ী নিয়োগ আটকে যায়। পরে ঘুষের বিনিময়ে অন্যদের মধ্যে সেই পদ বণ্টন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে গত ১২ মে এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গত ১১ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে কাউসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব লেখালেখিতে আমার কিছুই হবে না। অযথা সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন।
আরও পড়ুন:








