রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

চাঁদপুরে গোরস্থান থেকে জীবন ফিরে পাওয়া নবজাতকের মৃত্যু

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৯:৫৪

শেয়ার

চাঁদপুরে গোরস্থান থেকে জীবন ফিরে পাওয়া নবজাতকের মৃত্যু
ছবি: বাংলা এডিশন

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে কবর দেয়ার সময় নড়েচড়ে উঠেছিলো এক নবজাতক। মৃত্যু ভেবে যাকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, সেই অজানা শিশুটি শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে টিকতে পারলো না। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাঁদপুর শহরের ফেমাস হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। হাজারো মানুষের প্রার্থনা ও সহানুভূতির মাঝে শিশুটির মৃত্যুসংবাদ সারাদেশকে কাঁদিয়ে দেয়।

রবিবার দুপুরে চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি কার্টনে নবজাতক শিশুকে রেখে দাফনের জন্য দিয়ে যায়। গোরখোদক শিশুটিকে কবর দেয়ার আগে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী আজান দেওয়ার সময় হঠাৎ কার্টনের ভেতর নড়াচড়া লক্ষ্য করেন। দ্রুত উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের খবর দিলে তারা ছুটে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে চাঁদপুর ফেমাস হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, নবজাতকটির জন্ম সম্ভবত সেদিনই হয়েছিল। ভর্তি হওয়ার সময় তার অক্সিজেন লেভেল অত্যন্ত কম ছিল। চিকিৎসক দল সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

শিশুটিকে জীবিত দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়তেই সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চাঁদপুর সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতাধিক পরিবার নবজাতকের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেন। এর মধ্যে অন্তত ২৫ জন নারী সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে শিশুটিকে দত্তক নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা শিশুটির চিকিৎসা থেকে শুরু করে জানাজা ও দাফনের সমস্ত ব্যবস্থায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। শিশুটি মারা যাওয়ার পর ডিএনএ টেস্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে রাত ২টা ৩০ মিনিটে শহরের বাসস্ট্যান্ড মসজিদের সামনে জানাজা শেষে একই কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শিশুটিকে উদ্ধার করা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মোসাদ্দেক আল আকিব ও আশিক বিন রহিম বলেন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শিশুটিকে বাঁচাতে। হয়তো ব্যর্থ হয়েছি, তবে সংবাদ প্রচারের আগে চিকিৎসা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব মনে করেছি। যারা শিশুটিকে মৃত ভেবে কবর দিতে চেয়েছিল, তাদের প্রতি ঘৃণা জানাই। তবে চাঁদপুরের সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের একযোগে সহযোগিতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

এই ঘটনা চাঁদপুরের সীমানা ছাড়িয়ে সারাদেশে আলোচনার ঝড় তোলে। ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইন নিউজপোর্টালে ভাইরাল হয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিগুলো লাখো মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। নবজাতকের জীবন রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টায় এগিয়ে আসা সাংবাদিক ও মানবিক মানুষদের প্রতি নেটিজেনরা কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

কে বা কারা নবজাতকটিকে মৃত ভেবে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কবর দিতে পাঠিয়েছিল, তা এখনো জানা যায়নি। পুলিশ ও প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে।

কবরস্থান থেকে জীবনের আলো ফিরে পাওয়া নবজাতক হয়তো টিকতে পারেনি, কিন্তু তার ছোট্ট জীবন সারাদেশে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত গড়ে দিয়েছে। এক শিশুর মৃত্যু অগণিত মানুষকে কাঁদিয়েছে, আবার একই সঙ্গে মানুষের ভেতরের ভালোবাসা, মমত্ববোধ ও দায়িত্বশীলতাকেও জাগ্রত করেছে।



banner close
banner close