তিন সন্তানের জননী আয়তন বিবি (৫৫) বাকপ্রতিবন্ধি ও মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী আলীকে হাড়িয়েছেন ৯ বছর আগে। আয়তনের পরিবারের স্বামী সহ ৪ জনই মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল)।
স্বামী মৃত্যুর পরে নিজেই স্বামীর ভিক্ষের ঝুলি কাঁধে নিয়ে সংসারের হাল ধরেন। ছোট ছোট তিন সন্তান মানসিক ভারসাম্যহীন তাদের ঝুপড়িতে রেখে খাবারের সন্ধানে যেতেন মানুষের দুয়ারে, এখন বয়সের ভারে ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের ঘরে রেখে যেতে পারেন না কোথাও।
মাঝে মাঝে মেয়েরা অজানা গন্তব্যে হাড়িয়ে গেলে আবার খুঁজে বেড়ান আয়তন বিবি। সন্তান হাড়ানোর ভয়ে কোথাও যেতে পারে না আয়তন।
প্রতিবন্ধী ২ কণ্যা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে রাজাপুরের কন্দ্রকপুর গ্রামের ৩ ওয়ার্ডের ঝুপড়ি ঘরেই বসবাস আয়তনদের।
ভারসাম্যহীন সন্তানদের নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারেই দিন কাটে পরিবারটির। তবে পুণর্বাসন তো দুরের কথা তাদের খোঁজও রাখেন নি কেউ।
একসময় এলাকার সম্ভ্রান্ত জমাদার পরিবারের সহায়তায় কামাল হোসেন জমাদার এর জায়গায় ছিলেন আয়তনের স্বামী আলী মাঝি।
ঐ পরিবারের কামাল হোসেন জমাদার ধর্মীয় বিধি মোতাবেক আলী কে বিয়ে দেন ঐ এলাকার জেবর আলি মাঝির কণ্যা আয়তনের সাথে।
তাদের সাহায্য সহযোগিতায় চলছিলো আয়তনের সংসার। পরে রাক্ষুসে মেঘনায় রামদাসপুরে ঐ এলাকা নদীতে বিলীন হলে নিস্ব হয়ে যায় আয়তন সহ হাজারো পরিবার
নদী ভাঙ্গার পরে কন্দ্রকপুরের এই এলাকায় মসজিদের জায়গায় ঝুপড়ি তুলে বসবাস শুরু করেন। পরে এলাকাবাসীর সহায়তা করে তাদেরকে জৈনেক কামাল এর নিকট থেকে ৮ শতক জমি কিনে দেন। অর্থের অভাবে জমিটির রেজিষ্ট্রি দলিল ও নিতে পারেন নাই আয়তন। এখন সেই জমিতেই তাদের ঝুপড়ি ঘর।
আয়তনের দাবি এলাকাবাসী জমি কিনে দিছে কিন্তু আমার একটি ঘর হইলে ভালো হইতো।
আমার প্রতিবন্ধী ছেলে কালু মাছ ঘাটে গেলে মানুষ টাকা পয়সা দেয় তাতে খাবারের ব্যবস্থা হলেও ঘর নেই।
বৃষ্টি হলে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ভিজে ভিজে নির্ঘুম রাত কাটাই।
আয়তনের প্রতিবেশি মনির দেওয়ান বলেন আয়তন পাগল ছেলে মেয়ে নিয়ে বর্ষাকালে খুব কষ্টে কাটায়, তাদের বাঁচতে একটি ঘর জরুরী।
আরেক প্রতিবেশী আমজাদ বলেন এই অসহায় পরিবারের খোঁজ নেন নি কেউ, প্রতিবন্ধী কালু ঘাটে আসলে সবাই ৫/১০ টাকা বা ছোট ১টা মাছ দেই তাতেই চলে ওদের সংসার। এদের জন্য একটা ঘর হইলে ওরা ভালো থাকতো।
আযতনের প্রতিবেশী হালিমা বলেন ওরা খুজে ফিরে খাইতে পারে কিন্তু ওদের তো ঘর নেই একটা ঘর হইলে ওরা ভালো থাকতো।
ঐ এলাকার ইউপি সদস্য ওহাব আলী বলেন আমি যখন যা পারি সহায়তা করি, ওরা খুব অসহায় তাদের ঘরে সবাই প্রতিবন্ধী একটা ঘরের ব্যাবস্থা হইলে শান্তিতে থাকতে পারবে ওরা।
জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা রজত চন্দ্র সরকার বাংলা এডিশন কে বলেন আমরা দ্রুত তাদের প্রতিবন্ধী পরিচয় পত্রের আওতায় আনবো, এবং বিধি মোতাবেক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন আমরা আপনার মাধ্যমে একই পরিবারে ৩ জন প্রতিবন্ধীর কথা জানলাম, তাদের দ্রুত ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে, এবং যেহেতু তাদের
ঘরের অবস্থা ভালো না টিনের বরাদ্দ আসলে তাদের ঘরের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাবস্থা করা হবে ।
আরও পড়ুন:








