রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

মুহাম্মদ আবু আবিদ: এক তরুণ হৃদয়ের দুঃসাহসী স্বপ্নযাত্রা

মুনতাসির তাসরিপ

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৫:১৬

শেয়ার

মুহাম্মদ আবু আবিদ: এক তরুণ হৃদয়ের দুঃসাহসী স্বপ্নযাত্রা
ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নে তিনি কখনো আকাশ ছুঁতে চান, আবার কখনো মাটির কাছেই সিংহাসন গড়ে তোলেন। তবে তার প্রতিটি স্বপ্নেই লুকিয়ে থাকে মানবতার ছোঁয়া। নিরবে-নিভৃতে তিনি বুনে চলেন অসংখ্য স্বপ্ন, যার একমাত্র পুরস্কার মানুষের ভালোবাসা। সহজাত আন্তরিকতায় তিনি টেনে নেন মানুষকে। এই মানুষটি আর কেউ নন। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা যুবনেতৃত্বাধীন সামাজিক সংগঠন ‘দুর্বার তরুণ ফাউন্ডেশন’–এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু আবিদ। বয়সে তরুণ, কিন্তু কর্ম ও দৃষ্টিভঙ্গিতে অক্লান্ত যোদ্ধা তিনি। সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও যুবনেতা প্রতিটি ভূমিকাতেই তিনি অনন্য।

চট্টগ্রামের হালিশহরে জন্ম নিলেও তার শিকড় প্রোথিত পটুয়াখালীর মাটিতে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন সংস্কৃতিমনা নাটক মঞ্চে অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি কিংবা প্রাণবন্ত বিতর্কে সর্বত্রই ছিলেন প্রাণকেন্দ্র। স্বাভাবিক নেতৃত্বগুণ তাঁকে করে তুলেছিল সহপাঠীদের ভরসার প্রতীক। এই দীপ্তি তাকে টেনে নেয় সাংবাদিকতা ও সামাজিক পরিবর্তনের অভিযাত্রায়।

প্রায় এক দশকের সাংবাদিকতা জীবনে আবিদ কাজ করেছেন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন–এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও অনলাইন প্রধান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন–এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র এবং ঢাকা মহানগর ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি–এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এক সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিসেবেও কাজ করেছেন। অপরাধ, দুর্নীতি ও সামাজিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তার প্রতিবেদন তাকে দিয়েছে যেমন জনপ্রিয়তা, তেমনি শত্রুও। সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তার সোচ্চার অবস্থান তাঁকে এনে দিয়েছে বিশেষ সম্মান।

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দুর্বার তরুণ ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়েই সংগঠনটি তার অভিনব কর্মসূচির জন্য দেশব্যাপী আলোচনায় আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘আমরা মালি’ কর্মসূচি, যা শুধু বৃক্ষরোপণেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং গাছের পরিচর্যা ও পরিবেশ রক্ষার প্রতি তরুণদের গভীর সচেতনতা সৃষ্টি করে। দেশের লাখো তরুণ এতে অংশ নেয়, যা এক বৈপ্লবিক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়।

ফাউন্ডেশনটি এর বাইরে পরিচালনা করেছে অসংখ্য সৃজনশীল উদ্যোগ ফ্রি ঈদ শপিং, সবার জন্য চাল-ডাল, শীতে উষ্ণ খাবার বিতরণ, ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব, আমরা মানুষ (অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ), বিকল্প ভালোবাসা দিবস ও ভিন্নধর্মী নববর্ষ আয়োজন। প্রতিটি কর্মসূচিই শিল্প ও সামাজিক সেবাকে একসূত্রে গেঁথেছে, যা অভূতপূর্বভাবে তরুণদের সম্পৃক্ত করেছে এবং দেশ-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

তার নেতৃত্বে ফাউন্ডেশন পেয়েছে বিজনেস এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ (মালদ্বীপ), মহাত্মা গান্ধী আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার ২০২৪ (ভারত), ইন্টারন্যাশনাল আইকনিক এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ (নেপাল), বাংলাদেশ ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩, করোনা ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২ সহ নানা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা। কিন্তু আবিদ বারবার মনে করিয়ে দেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো মানুষের ভালোবাসা।’

মুহাম্মদ আবু আবিদের গল্প আসলে এক তরুণ হৃদয়ের দুঃসাহসী স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। তিনি দেখিয়েছেন দারিদ্র্য কিংবা প্রতিকূলতা কোনো কিছুই স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না। দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব, অনুপ্রেরণা হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রভাত নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসে হাজারো তরুণের জীবনে। কিন্তু আবিদ আলাদা, কারণ তিনি প্রমাণ করেছেন একজন তরুণও চাইলে পুরো জাতিকে নাড়া দিতে পারে, হতে পারে বিস্ময়ের প্রতীক।



banner close
banner close