রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

উপকূলের মৎস্য খাতে অব্যবস্থাপনা, তদারকির অভাবে বাড়ছে ফাঁকি

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৫১

শেয়ার

উপকূলের মৎস্য খাতে অব্যবস্থাপনা, তদারকির অভাবে বাড়ছে ফাঁকি
ছবি: বাংলা এডিশন

দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছের বেচা-কেনা হলেও সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে অতি সামান্য রাজস্ব। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, আলিপুর ও মহিপুরের মৎস্য বন্দরে সরকারি অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) এড়িয়ে ব্যক্তিগত ঘাটে ব্যবসা করায় রাজস্ব ফাঁকি দিন দিন বাড়ছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলার ঘাটগুলোতে বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। অথচ সরকারের রাজস্ব আসে মাত্র ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এ আয় দ্বিগুণেরও বেশি হতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রের পরিবর্তে নিজস্ব ঘাটে মাছ নামাচ্ছেন। ফলে বড় অঙ্কের লেনদেন সরকারি নথিতে উঠছে না। উদাহরণ হিসেবে আলিপুর অবতরণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৩ জুলাই একটি ট্রলার প্রায় ৬৫ মণ ইলিশ বিক্রি করে ৪০ লাখ টাকা আয় করে। এ আয় থেকে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব ছিল প্রায় ৫০ হাজার টাকা, অথচ ব্যবসায়ী মাত্র ২ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

২০০৯ সালে আলিপুর ও মহিপুরে দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিএফডিসি। প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে এবং ২০২১ সালে কেন্দ্র দুটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু মহিপুর কেন্দ্র সীমিত জায়গার কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। সেখানে মাত্র ৪৫ জন ব্যবসায়ী কার্যক্রম চালাতে পারলেও নিবন্ধিত আছেন ৮২ জন, ট্রলার রয়েছে এক হাজারেরও বেশি, পাইকার ২০০ জন এবং শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮০০। প্রতিদিন ভিড় আর সংঘাত এড়াতেই তারা ব্যক্তিগত ঘাটকে বেছে নিচ্ছেন।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মজনু গাজী বলেন, ‘এতো ছোট জায়গায় ব্যবসা করা সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত জায়গা বরাদ্দ দিলে আমরা রাজস্ব দিয়ে কেন্দ্রেই ব্যবসা করবো।’

অপরদিকে আলিপুরের ব্যবসায়ীরাও জানালেন, মহিপুরে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ায় তারাও অনিচ্ছা সত্ত্বেও নামমাত্র রাজস্ব দিচ্ছেন।

আলিপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এ অবস্থার কারণে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১২ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বিএফডিসিকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজস্ব ফাঁকি রোধে ডিজিটাল ওজন মেশিন, অনলাইন চালান ব্যবস্থা এবং ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন বাধ্যতামূলক করা জরুরি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত ঘাটগুলোকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এতে প্রতিবছর বাড়তি ৪-৫ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ সম্ভব হবে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মহিপুর অবতরণ কেন্দ্রে জায়গা স্বল্পতা রয়েছে, বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।



banner close
banner close