ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর ক্লাব ও লাইব্রেরি। প্রায় ৯০ বছর আগে যাত্রা শুরু হয় ক্লাবটির৷ দীর্ঘ সময়ের পদযাত্রায় ছিল উত্থান-পতন৷ তবে থেমে যায়নি৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে উপজেলা পরিষদ৷ কিনতে হবে ক্রীড়া সামগ্রী। তবে বিধিবাম। ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও অনুদানের টাকা সম্পর্কে কিছুই জানেননা ক্লাবটির সদস্যরা৷ পাননি কোন আর্থিক সহযোগিতা।
একইভাবে জুন মাসে উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের একতা যুব ক্লাব ও কুমারপুর স্পোর্টিং ক্লাবের আসবাবপত্র ও খেলার সামগ্রী কেনার জন্য ২ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়। এ দুই নামেও ক্লাবের সন্ধান মিলেনি৷ নামই শোনেননি স্থানীয় খেলোয়াড় ও বাসিন্দারা৷
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন। ছয় মাসে এমন ভুতুড়ে বিলের রাজ্যে পরিণত হয়েছে সদর উপজেলা পরিষদ। মার্চ মাসে রহিমানপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম ও সালান্দর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য পুলক চন্দ্র সেনকে প্রকল্প চেয়ারম্যান বানিয়ে ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকার চুড়ান্ত বিল দেওয়া হয়৷ দুটি ইউনিয়নের খেলোয়াড়দের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণের কথা থাকলেও প্রকল্প সম্পর্কেই জানেননা সভাপতিরা।
জুলাই আন্দোলনে চলাকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িটি পুড়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। গ্যারেজে মেরামতে রেখে দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৮১৮ টাকার ভুয়া জ্বালানি বিল।
জানুয়ারী মাসে একই স্থানের ভিআইপি পর্দা কেনা হয়েছে ২ বার। জুন মাসে একটি সাব-মার্সেবল পাম্প কেনা হয়েছে ৩ বার, একই ধরনের স্যানেটারি মালামাল কেনা হয়েছে ৩ বার৷ এছাড়াও ইলেটক্ট্রিক ও সিসিটিভি মেরামত-মালামাল ক্রয় দেখানো হয়েছে একাধিকবার। তবে বিলের সাথে সম্পর্কে নেই বলে জানান বিল গ্রহণকারীরা৷
ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে এসব বিল বানানোর কারিগর জারীকারক নুরুল ইসলাম নুরু৷ অনুসন্ধানের খবরে তাড়াহুড়ো করে বদলী করা হয় তাকে৷ অভিযোগ রয়েছে,নুরুর মাধ্যমেই সকল প্রকল্পের কমিশন যেত ইউএনও-এর পকেটে৷
যোগদানের পর থেকে বাকশাল কায়েম করেছেন ইউএনও। টাকা ছাড়া দেননা কোন সেবা। শুধু কর্মস্থলে নয় চাকরী প্রভাব খাটিয়েছেন নিজ এলাকা বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। বাড়িতে যাতায়াত করেন সরকারি গাড়িতে। বগুড়া শহরে ১০ শতক জমি,গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি, রয়েছে মসজিদের জমি দখলেরও অভিযোগ। পতিত সরকারের নেতাদের আদলে পেয়েছেন প্রশাসনে চাকরী। গণ-অভুত্থানের পরে পাল্টে ফেলেছেন ভোল্ট। নিজেকে দাবি বৈষ্যমের শিকার।
মুথরাপুর ক্লাব ও লাইব্রেরির সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল জেলি ও বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, আমাদের ক্লাবের নামে বরাদ্দ হয়েছে আমরা জানিনা৷ আমরা আবেদন দেয়নি অথচ বরাদ্দ নাকি ৪ মাস আগে পেয়েছি। আমাদের কোন সদস্যের এই বরাদ্দের সাথে সম্পর্ক নেই৷ যদি দিতে থাকে তাহলে আমাদের বরাদ্দ গুলো দেওয়া হোক। ক্লাবের কাজে আসুক৷
বালিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় খেলোয়াড়রা বলেন,এই নামে ক্লাব নেই। আমরা আজই এই ক্লাব সম্পর্কে অবহিত হলাম৷
প্রকল্প সভাপতি সালান্দর ও রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম ও পুলক সেন বলেন,আমরা প্রকল্প সম্পর্কে জানিনা৷ আর কোন ক্রীড়াসামগ্রী কেনাকাটা করিনি৷ এসব প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের অবহিত করা হয়নি৷
রুপসী বাংলা অয়েল পাম্পের ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে চেয়ারম্যানের গাড়ি তেল নেওয়া হয়নি৷ এই বিলের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই৷
ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় বলেন, টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়না৷ সব প্রকল্পের টাকা নুরুকে দিতে হয়৷ সে বলে এসব টাকা ইউএনও-কে দিতে হয়৷ ১৪ পার্সেন্ট থেকে শুরু করে ১৭ পার্সেন্ট পর্যন্ত দিতে হয়৷
এসব ভুতুড়ে বিল সম্পর্কে জানতে চাইলে কথা বলতে নারাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের৷
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখার পাশাপাশি সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
আরও পড়ুন:








