সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বাড়ছে নাইক্ষংছড়ি সীমান্তে চোরাচালান

মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:২৮

আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:৫১

শেয়ার

বাড়ছে নাইক্ষংছড়ি সীমান্তে চোরাচালান
ছবি: বাংলা এডিশন

কোন মতেই থামানো যাচ্ছে না সীমান্তের চোরাচালান কারবারিদের। মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত ঢুকছে ইয়াবা, সিগারেট, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। তাছাড়াও এদিক থেকে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, ভোজ্য তেল, নির্মাণসামগ্রী এবং কিটনাশক সার।

এদিকে উপজেলার সোনাইছড়ি, ঘুমধুম ইউনিয়নসহ নাইক্ষংছড়ি উপজেলার প্রায় শতাধিক উপজাতি যুবক আরাকার আর্মিতে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরাকান আর্মির উদ্দেশ্য হচ্ছে সীমান্তে তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাদক, ইয়াবা, সিগারেট, ফেন্সডিল, স্বর্ণ গরু চোরাচালান কারবার করানো।

স্থানীয়রা ভয়ে মুখ না খুললেও পরিচয় গোপন রাখা শর্তে বেশ কয়েক স্থানীয়রা বলেন, সোনাইছড়ি, ঘুমধুমসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৩শ যুবক আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়ে দেশে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশে দেশের নিরাপত্তায় বিষয়টি মারাত্বক হুমকী হিসেবে দাঁড়াবে বলেও জানায় স্থানীয়রা।

ইতোমধ্যে ১১ আগস্ট আরাকান আর্মি থেকে পালিয়ে আসা জীবন তঞ্চঙ্গ্যা নামের একজন অস্ত্রসহ আত্মসর্মপন করছে বিজিবির হাতে। সে নিজেই স্বীকার করেছে যে, সে বাংলাদেশি নাগরিক এবং তার এনআইডি কার্ড রয়েছে। তার বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের গর্জন বুনিয়া গ্রাম। তার পিতার নাম চিংমং তঞ্চঙ্গ্যা। তাছাড়াও ১৭ আগস্ট আরাকান আর্মির সহযোগী উলাই চাকমা এবং নয়ন চাকমা নামের দুইজনকে আটক করেছে বিজিবি যার মধ্যে একজনের বাড়ি রাঙ্গামাটি এবং অপরজনের বাড়ি মিয়ানমারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় জানায়, সীমান্ত এলাকার উপজাতি যুবকরা আরাকান আর্মিতে যোগ দিয়ে এপারের পরিস্থিতি সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য পাচার করছে তারা। ওপার থেকে মাদকের সাপ্লাই পুরোটাই তারা নিয়ন্ত্রণ করছে।

আরেকজন স্থানীয় জানায়, বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা (যোগ দেওয়া আরাকান আর্মিরা) সীমান্ত ব্যাপকভাবে বিচরন করছে। এপারে সাধারন মানুষ হয়ে ঢুকে আবার ওপারে গেলে আরাকান আর্মির পোশাক পরিধান করে। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।

এদিকে চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপহরন হত্যাকান্ডের স্বীকার হচ্ছে সীমান্ত এলাকার অসংখ্য মানুষ। স্থানীয়রা জানায়, অপহরন, চোরাচালান অস্ত্র পাচার, এমনকি সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়াসহ সব কিছুই চলে এখানে। এটি যেন বাংলাদেশের ভেতরে আরেকটি পরাধীন ভূখণ্ড।

স্থানীয়রা আরো জানান, বিগত কয়েক বছরে এই সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের বিষয় নিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যার স্বীকার হয়েছে, অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। হয়েছে অনেকেই স্বামী পিতা হারা।

মিয়ানমার সীমান্তের ভিতরে প্রবেশ করে চোরাচালান কারবার করতে গিয়ে বিগত এক বছরে অসংখ্য মানুষ হাত-পা বিচ্ছিন্নসহ আহতের ঘটনাও ঘটেছে। এইতো মাত্র কয়েকদিন আগেই সীমান্তে চলাচল করতে গিয়ে একটি হাতিও মাইন বিস্ফোরনে আহত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরে সীমান্তে চোরাচালান করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক ব্যক্তির হাত-পা বিচ্ছিন্নসহ আহতের ঘটনা ঘটেছে।

তাছাড়াও অরক্ষিত এই সীমান্তে ব্যাপক হাড়ে বেড়েছে মাদকদ্রব্য পাচার। এমন কোন দিন নেই যে মাদক পাচার হচ্ছে না। যদিও বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে সীমান্তের অপরাধ দমনে স্বর্বাত্বক চেস্টা করেই যাচ্ছে তারা।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সুত্রে জানা যায়, বিগত বছরে ছোটবড় অভিযানে প্রায় হাজার কোটি মাদকও উদ্ধার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঘুমধুম ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, বর্তমানে জান্তা সরকার রাখাইনে কোন খাদ্যসামগ্রী, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্যগুলে সাপ্লাই না দেওয়ায় আরাকান আর্মিরা প্রচুর সংকটে পড়েছে। ফলে তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে চোরাচালান বৃদ্ধি করে ইয়াবা, গরু, সিগারেটসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সাপ্লাই দিয়ে এদিক থেকে চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী এবং সার নির্মাণ সামগ্রি নিয়ে যাচ্ছে চোরাচালান কারবারিদের মাধ্যমে।

আরেকজন স্থায়ী বাসিন্দা বলেন, এভাবে খাদ্য সার পাচার অব্যহত থাকলে আমরা দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বো তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাই এটি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সীমান্তের বিষয়গুলো নিয়ে বাংলা এডিশনের সাথে কথা হয় নাইক্ষংছড়ি ১১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল কফিল উদ্দিন কায়েস এবং কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম খায়রুল আলমের সাথে।

তারা বলেন, সীমান্ত এলাকার যুবকরা আরাকান আর্মিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টা আন অফিসিয়ালি শুনেছি তবে অফিসিয়ালি কোন তথ্য আমাদের কাছে নাই। সেহেতু আপাতত কিছু বলতে পারছিনা। তবে সীমান্তে বিজিবি কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সীমান্ত চোরাচালান প্রতিহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমরা ইতোমধ্যে অসংখ্য মাদক আটক করেছি যা আপনারা বিভিন্ন সময়ে জেনেছেন।



banner close
banner close