রবিবার

১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

প্রধান শিক্ষিকার স্বেচ্ছাচারিতায় টালমাটাল বাগাতিপাড়া সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৯:৩৯

শেয়ার

প্রধান শিক্ষিকার স্বেচ্ছাচারিতায় টালমাটাল বাগাতিপাড়া সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
ছবি: বাংলা এডিশন

নাটোরের বাগাতিপাড়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, প্রায় আট দশকের পুরোনো এ বিদ্যাপীঠ, বর্তমানে ভয়াবহ সংকটে নিমজ্জিত। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০১৮ সালে সরকারিকৃত এই স্কুল একসময় এলাকার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও আজ ভাঙা অবকাঠামো, প্রশাসনিক অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে সুনাম হারাতে বসেছে। অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা অনিতা রানীর অব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়টি কার্যত ধ্বংসের পথে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিষ্ঠানের এফডিআর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তছরুপ করেছেন, সরকারি বরাদ্দ ব্যয়ে অনিয়ম করেছেন এবং ম্যানেজিং কমিটি বা ভর্তি কমিটি ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, “ছাত্রভর্তি থেকে অর্থ ব্যবস্থাপনা সবকিছুতেই স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”

অপর বাসিন্দা মান্নান আলী জানান, “এখন বিদ্যালয়টি পড়ালেখার জায়গা নয়, বরং মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।”নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক-কর্মচারীদের একাংশ জানান, প্রতিষ্ঠানের দুটি আইসিটি ল্যাব থাকলেও তা বছরের পর বছর ব্যবহার হচ্ছে না। যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।এর আগে ওই প্রধান শিক্ষিকার ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, তার চলতি দায়িত্বকাল শেষ হওয়ার পরও অনিতা রানী নিয়ম অনুযায়ী নবায়ন না করে পদে বহাল আছেন। এর আগে তিনি গত বছর ১২ আগস্ট তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ‘বঙ্গবন্ধু ফিরে আসুক’শিরোনামে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা নয়, শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠে এখন অবাধে মাদকসেবীদের আনাগোনা। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষিকা এসব নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, ম্যানেজিং কমিটি ছাড়া ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, বার্ষিক অডিট না করা কিংবা চলতি দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হলেও পদে বহাল থাকা আইনি অপরাধ। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ দুটিই অন্ধকারে তলিয়ে যাবে। এ বিষয়ে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অনিতা রানী বলেন, “প্রতিষ্ঠানের এসব সমস্যা দেখার জন্য সরকার আছে, সরকার দেখবে। আমি এ বিষয়ে সাংবাদিকের কাছে কিছু বলব না। সরকার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, পালন করছি। আর সরকার যদি দায়িত্ব থেকে সরায় দেয়, আমি সরে যাব।”উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী মৃধা জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, বিষয়গুলো খাতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে প্রশাসনের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, শুধু “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব”বলা যথেষ্ট নয়। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক তদারকি করা এবং অনিয়মের প্রমাণ বা অভিযোগ না এলেও নিয়মিত পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে প্রশাসনের দায়-দায়িত্ব কোথায়?



banner close
banner close