অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারের ‘দখলদারত্ব, অনিয়ম ও ধ্বংসযজ্ঞ’ বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে কুড়িগ্রামের ১৯ টি সাংস্কৃতিক, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও নাগরিক সংগঠন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রামের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক ও পাঠাগারের সভাপতি সিফাত মেহনাজের হাতে এই স্মারকলিপি তুলে দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারটিতে বর্তমানে বই পড়ার কোনও পরিবেশ নেই। পাঠাগারটি রাজনৈতিক প্রভাব এবং ব্যক্তিস্বার্থে ব্যক্তিগত রিডিং রুম ও কোচিং সেন্টারে পরিণত হয়েছে। ফলে জেলার সাধারণ পাঠক ও হাজারো শিক্ষার্থী এ পাঠাগারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাঠাগারটিতে সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে। অনিয়ম ও দখলদারিত্ব বন্ধ করে পাঠাগারটি সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে পাঠাগারের ভিতরে চাকরির প্রস্তুতিমূলক কোচিং কার্যক্রম শুরু হয়। ধীরে ধীরে পুরো পাঠাগার কোচিং সেন্টারের দখলে চলে যায় এবং বর্তমানে সপ্তাহের সাত দিনই কোচিং কার্ক্রম চলে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে পাঠাগারের দোতলার একটি পরিত্যক্ত রুমে পাঠচক্র, শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আয়োজন শুরু হয়, যার নাম দেওয়া হয় “কুড়িগ্রাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র”। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা প্রশাসকের লিখিত অনুমতিতেই এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক রূপ পায়। কিন্তু চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা তালা ভেঙে কেন্দ্রটি দখল করে।
সংগঠনগুলোর দাবি, বর্তমানে পাঠাগারে নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত বই ও চাকরির গাইড স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। টেবিল-চেয়ার ভাগ করে ব্যক্তিগত দখলদারত্ব তৈরি করা হয়েছে। এমনকি পাঠাগারের ভিতরে ব্যক্তিগত টেবিল রাখা হয়েছে।
অবহেলা আর অযত্নে পাঠাগারে থাকা অজস্র প্রাচীন ও অমূল্য বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বই রাখার রেকের তাকগুলো ধুলো ও মাকড়সার জালে ঢেকে আছে। সরকারি অর্থে পরিচালিত এ পাঠাগারকে কয়েকজন ব্যক্তি নিজেদের সম্পত্তি মনে করে ব্যবহার করছে, যা জেলার সাংস্কৃতি ও শিক্ষা চর্চার ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবৈধ দখল অবিলম্বে উচ্ছেদ করে অমূল্য বই সংরক্ষণ ও পাঠাগারটি সংস্কারের মাধ্যমে সাধারণ পাঠক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করার পাশাপাশি দ্বিতীয় তলার কক্ষটি পুনরায় ‘কুড়িগ্রাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের’ কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
পাঠাগারের গুরুত্ব তুলে ধরে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারকে বাঁচানো মানে কুড়িগ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎকে বাঁচানো।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পাঠাগারের সভাপতি সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘স্মারকলিপিটি আমি আজ পেয়েছি। বিস্তারিত জেনে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখবো।’
হিজিবিজি, কুড়িগ্রাম সাহিত্যসভা, অনুশীলন, কুড়িগ্রাম বিজ্ঞান ক্লাব, ডিবেট কুড়িগ্রাম, পরিবেশ বীক্ষণ, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, প্রীতিলতা ব্রিগেড, পদ্মকলি খেলাঘর আসর, এনসিটিএফ, ওয়াইসিএস, প্রথম আলো বন্ধুসভা, সারথী, জুভেন্স রাইট নেট, চর মিউজিয়াম, জেএফসিএলআর, ইয়োথনেট, বসুন্ধরা শুভ সংঘ ও এসিএমও—এই ১৯টি সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন:








