বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

হরিরামপুরে দুই মাসে প্রায় দুই ‘শ’ হেক্টর আবাদি কৃষি জমি পদ্মায় বিলীন

‎হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ, প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৮:১০

শেয়ার

হরিরামপুরে দুই মাসে প্রায় দুই ‘শ’ হেক্টর আবাদি কৃষি জমি পদ্মায় বিলীন
ছবি: বাংলা এডিশন

অনবদ্য পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে ভয়াবহ ভাঙন কবলে আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন উপজেলা সদর থেকে অনেক আগেই সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমেও উপজেলার চরাঞ্চল সহ এপারেও কয়েকটি ইউনিয়নের ভাঙ্গন দেখা দেয়। রাতে ও দিনে সমান তালে ভাঙ্গন দেখা দিলে দুর্গম চরণচল লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকার অনেক বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।

উপজেলার কৃষি অফিসের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে গত দুই মাসে এ উপজেলার প্রায় ২শ হেক্টর আবাদি এবং অনাবাদী জমিসহ প্রায় দেড়শ বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভাঙন আতংকে শতশত পরিবার ঘরদরজাসহ আসবাবপত্র অন্য জায়গা সরিয়ে নেয়। তবে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাশাপাশি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকায়ও ভাঙন দেখা দেয়। এতে বেশ কয়েকটি কলার বাগান বিলীন হয়ে যায় এবং ভাঙনের হুমকিতে পড়ে বেশ কয়েকটি বসত বাড়ি। এরফলে এ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ১২০ মিটার এলাকা আপদকালীন জিওব্যাগ ডাম্পিং করে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়ার নতুন হাট, গঙ্গাধরদি, পাটগ্রাম ও সেলিমপুর এলাকার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। দিনে রাতে সমান তালে বিলীন হয় ফসলি জমি ও বসত ভিটা। সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয় সেলিমপুর বাজার। এছাড়াও নদীর তীরবর্তী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে হরিহরদিয়া ও গঙ্গাধরদি বাজার। ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে এ দুটি বাজার অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। হরিহরদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের অর্ধকাংশ বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে প্রকল্পের প্রায় একশ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। দুই মাসে এ ইউনিয়নের প্রায় চারশ পরিবার বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে এলাকাবাসী জানান।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া গ্রামের রাসেল মিয়া জানান, বর্ষার প্রথম দিকে যখন নদীতে জোয়ারের পানি আসে, তখন থেকেই দিনে রাতে সমানে ভাঙতে থাকে। আবাদি ফসলের জমি এবং বসতভিটা বিলীন হতে থাকে। আমরা অনেকেই ভাঙ্গনের অবস্থা দেখে ঘর এবং আসবাবপত্র

অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাই। তবে এখন পানি কমতে থাকায় বর্তমানে ভাঙনের পরিমাণ কিছুটা কম। কিন্তু পানি যদি আবার বাড়তে থাকে তাহলে আবারও ভাঙ্গন দেখা দিবে। এভাবে যদি নিয়মিত ভাঙতে থাকে তাহলে এই বৃহৎ চরাঞ্চলের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই আমাদের দাবি, এই চরাঞ্চল রক্ষায় যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর বাম তীরে লেছড়াগঞ্জ , সুতালড়ি ও আজিমনগর ইউনিয়ন অবস্থিত তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার জনবসতি। যমুনা নদীর ডান তীরে বালিদ্বারা আবৃত চর এলাকায় লোকজনের বসবাস। চর সমূহে প্রচুর পরিমাণ ফসল উৎপাদন হয়। চর এলাকা যেন নদী ভাঙ্গনের শিকার না হয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কারিগরি সমীক্ষা গ্রহনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে । পরবর্তীতে কারিগরি সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।



banner close
banner close