ভৈরব ও আশুগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভয়াবহ নদী ভাঙন, পরিবেশ বিপর্যয় ও জাতীয় স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ২৩০ কেভি বিদ্যুতের রিভার ক্রসিং টাওয়ার, নৌবন্দর ও বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার গ্রুপের প্রতিনিধি এ টু বি কর্পোরেশন তিন মাসের জন্য সীমিত পরিসরে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেলেও শর্ত ভঙ্গ করে নদীতে ১৫-২০টি ড্রেজার বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছে। নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে নদীর পাড় পর্যন্ত বালু তোলা হচ্ছে এবং এসব বালু নৌকায় বিক্রি করায় চরসোনারামপুর, পানিশ্বর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
চরসোনারামপুর গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসতি সরাসরি হুমকির মুখে। গ্রামসংলগ্ন বিদ্যুতের রিভার ক্রসিং টাওয়ারের নিচের মাটি ধসে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে জাতীয় গ্রিডে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এর আগে ২০২২ সালে তৎকালীন আশুগঞ্জ ইউএনও ও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে বালু উত্তোলন করলে বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর, কৃষিজমি ও বসতি হুমকির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও সম্প্রতি অনুমতি দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
আশুগঞ্জ জেনারেল মার্সেন্ট এন্ড কমিশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জারু বলেন, “এ অবস্থা চলতে থাকলে আশুগঞ্জ বন্দরসহ আশপাশের গ্রামগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি, প্রয়োজনে আদালতে যাব।”
অন্যদিকে মীর আক্তারের প্রতিনিধি ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল আহমেদ জয় দাবি করেছেন, তারা নিয়ম মেনেই বালু তুলছেন। তার অভিযোগ, “ভৈরবের একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলছে, আর দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।”
আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক (টেকনিক্যাল) আব্দুল মজিদ বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশ দিয়ে বালু তোলা হলে জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে, এতে সারা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হবে।”
ভৈরব বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “আশুগঞ্জ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে।”
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া জানান, “মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পের জন্য সীমিত সময়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চুক্তি ভঙ্গ বা সীমানা অতিক্রম করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের আশঙ্কা, অবিলম্বে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভৈরব-আশুগঞ্জ শিল্পাঞ্চল ও হাজারো মানুষের বসতি নদীগর্ভে বিলীন হবে, যার বিরূপ প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও।
আরও পড়ুন:








