প্রচণ্ড ঢেউ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় দ্রুত শ্রীহীন হয়ে পড়ছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। একসময় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত সৈকত এখন সংকোচিত হয়ে ঠেকেছে বেড়িবাঁধের গা ঘেঁষে।
সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের চোখে ধরা পড়ছে ধ্বংসের চিহ্ন। বালু ক্ষয়ে সৈকতের বুকজুড়ে উঁকি দিচ্ছে ভাঙনের ক্ষত। সাম্প্রতিক নিম্নচাপের উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ে ধ্বংস করেছে সৈকতসংলগ্ন নির্মাণাধীন সড়ক। জিরো পয়েন্টের দুই পাশে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কংক্রিট ও ভগ্নাংশ। ঝুঁকিতে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স, মসজিদ, মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু, মোরা, ফণী, বুলবুলসহ একের পর এক দুর্যোগ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কুয়াকাটা সৈকতের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নারিকেল, তাল, শালবন, ঝাউবন, এমনকি জাতীয় উদ্যানও এখন ইতিহাস। ফলে পর্যটনকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে ব্যবসায়ী ও পর্যটনকর্মীদের উদ্বেগ।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, “সৈকতের ভাঙন শুধু বালু সরে যাওয়া নয়, বরং পুরো পর্যটন খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কুয়াকাটা হলো দেশের একমাত্র জায়গা, যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসঙ্গে দেখা যায়। কিন্তু সৈকতের সৌন্দর্য হারালে পর্যটকদের আগ্রহও হারাবে। তখন শুধু পর্যটন নয়, স্থানীয় পরিবহন, হোটেল, দোকান, রেস্তোরাঁসহ হাজারো মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। স্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কুয়াকাটার ভবিষ্যৎ নেই।”
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, “কুয়াকাটা পর্যটন আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর মৌসুমে লাখো পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু এখন ভাঙন দেখে অনেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এতে পর্যটন ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা বাঁধ ছাড়া এ সংকট সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।”
পর্যটনকর্মী কে এম বাচ্চু বলেন, “আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন সৈকত ভেঙে যাচ্ছে। কুয়াকাটা কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়, বরং স্থানীয়দের জীবিকা, সংস্কৃতি ও স্বপ্নের অংশ। যদি এখনই সুরক্ষা ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আগামী এক দশকের মধ্যে কুয়াকাটা হয়তো মানচিত্রেই থাকবে না।”
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, “ইতিমধ্যে সৈকতের জরুরি সুরক্ষায় কিছু অস্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। একটি টেকসই প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু করা হবে।”
আরও পড়ুন:








