চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপকেন্দ্রগুলোতে গত এক বছর ধরে সরকারি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর পাশাপাশি এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আরও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে খাবার পানির টিউবওয়েল নষ্ট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঝাড়ুদারদের মাধ্যমে ঔষধ বিতরণ এবং কর্মঘন্টা ফাঁকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর, মনাকষা, কানসাট, চককীর্তি, মোবারকপুর, দাইপুকুরিয়া ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রোগীদের জন্য প্রায় বছর খানেক থেকে কোনো ওষুধ নেই। রোগীরা চিকিৎসার আশায় সেসব কেন্দ্রে গেলেও ঔষধ না পেয়ে বিষন্ন মনে ফেরত আসছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কানসাট ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক না থাকলেও আয়া তার অনুপস্থিতিতে রোগীদের রোগের কথা জিজ্ঞেস করে ঔষধ দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে। আগত রোগীদের অভিযোগ, ‘শুধুমাত্র ঠান্ডার ঔষধ ছাড়া আর তেমন কোন ঔষধ এখানে পাওয়া যায় না।’
শ্যামপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রায় এক বছর ধরে কোনো ওষুধ না থাকলেও অফিসের আলমারির ওপর মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু ওষুধ পড়ে আছে। এছাড়া কেন্দ্রের চারপাশে ময়লা আবর্জনা পড়ে থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সকাল পৌনে ১০ টা বেজে গেলেও শুধু ঝাড়ুদার ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায় নি। এখানকার কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নাজমুল হাসান নাহিদ না থাকায় ফার্মাসিস্ট বেলাল উদ্দিন জানান, এক বছর ধরে ওষুধ না থাকায় তারা রোগীদের ওষুধ দিতে পারছেন না। তবে, নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসা-যাওয়া এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দেননি।
কেন্দ্র সংলগ্ন পাশের জমিতে চাষাবাদ করেন পাশের গ্রামের এক মহিলা। কার অনুমোদন নিয়ে চাষাবাদ করেন? প্রশ্ন করলে তিনি জানান, অফিসারদের তিনি এখান থেকে যা উৎপাদন করেন তার একটা অংশ প্রদান করেন।
অন্যদিকে, মোবারকপুর ইউনিয়নের লাহাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক অফিস নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া, এই ক্লিনিকে অশিক্ষিত ও বহিরাগত দুজন মহিলাকে দিয়ে ওষুধ বিতরণ করানো হয়। এ বিষয়ে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোসাঃ সাহিনা আখতার অভিযোগর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাঝে মধ্যে আমি ব্যস্ত থাকলে তারা ঔষধ দেয়। তবে প্রতিদিন দেয় না। অন্যদিকে নিশি নামের অষ্টম শ্রেণী পাস করা মহিলার সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রায় চার বছর থেকে তিনি নিয়মিত এ দ্বায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া সাহিনা আখতার অভিযোগ করে বলেন, আমার কেন্দ্রে খাবার পানির টিউবওয়ের অকেজো হয়ে পড়ে আছে। প্রায় চার মাস ধরে কেন্দ্রে কোনো ধরণের ঔষধ সরবরাহ নেই। কেন্দ্রে সরকারি ভাবে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ পাই নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা জানিয়েছে, বিদ্যুৎ নিলে আমার ব্যক্তিগত টাকা খরচ করেই বিদ্যুৎ নিতে হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগের বিষয় গুলো আমি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ লোকবল সংকট প্রসঙ্গে বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৪ সালের পরে ২০২৪ সালে নিয়োগ দেওয়া হলেও আমার চাহিদা মতো লোকবল পাইনি। যারা ছিল তারাও পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে গেছে ফলে লোকবল সংকট তৈরী হয়েছে।’
অন্যদিকে, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু সাঈদ মুহাম্মদ মাসুদ জানান, ওষুধ সংকট সমাধানের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের সাথে কথা বলেছেন এবং আগামী মাস থেকে ওষুধ সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এই ধরনের অব্যবস্থাপনা সরকারি নিয়ম ভঙ্গের পাশাপাশি তাদের দায়িত্বেও গাফিলতির প্রমাণ। তারা আফসোস করে বলেন, ‘হাসিনা পালিয়ে যাবার সাথে সাথে মনে হচ্ছে সকল ঔষধপত্রও নিয়ে গেছে।’ এসব অব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন:








