এক সময় ছিল, বরইতলা নদীর বুক চিরে খরস্রোতা স্রোত বয়ে যেত, মাছ ধরার জাল ভরতো শিকার, নৌকার পাল ভরতো হাওয়ায়। আজ সেই নদী যেন শ্বাসরুদ্ধ এক দেহ—অপরিকল্পিত বাঁধে প্রবাহ হারিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর ও ডালবুগঞ্জের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদী কাগজে কলমে বরইতলা নামে পরিচিত হলেও স্থানীয়দের কাছে সোনামুখী বা গাববাড়িয়া নামেই বেশি পরিচিত। গাববাড়িয়া পয়েন্টে বাঁধ দেয়ার পর থেকেই নদীর প্রাণহীন অবস্থা প্রকট হয়ে উঠেছে। জোয়ারের সময় পানি ওঠে, কিন্তু ভাটায় নামতে না পারায় নদী ও শাখা খালগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, আগে খাল-বিলের প্রাকৃতিক পানি ব্যবহার করে সেচ দেওয়া যেত। এখন যান্ত্রিক সেচে নির্ভর করতে হচ্ছে, যার খরচ অনেক বেশি। প্রায় ৭৫ হাজার একর কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে থাকায় অর্ধলক্ষ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
কৃষিবিদরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে, ম্যানগ্রোভ বনভূমি হুমকির মুখে। একসময় এ নদীপথে নৌকা, ট্রলার, লঞ্চ চলাচল করলেও এখন তা অতীত। নদীর বুক জুড়ে জমে থাকা পলিই প্রমাণ করছে, নদী আস্তে আস্তে ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
মনসাতলী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, “বাঁধের কারণে নদীর প্রাণহীন হয়ে গেছে। স্লুইসগেট অকেজো, শাখা খাল ভরাট। এখন বীজতলা তৈরি করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।”
আরেক কৃষক জাকির হোসেনের ভাষায়, “বরইতলা এখন নদী নয়, ভরাট মাঠ। আগে মাছ ধরা আর নৌকা চলাচলের জন্য বিখ্যাত ছিল, এখন পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়।”
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা–ধরা’র সমন্বয়ক মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, “বাঁধ দিয়ে নদীর বুক ভরাট করা মানে নদী হত্যা। এতে শুধু নদী নয়, আশপাশের খাল-বিলও ধ্বংস হচ্ছে।”
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইয়াসীন সাদেক বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কৃষক ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূরীকরণে টেঁকসই সমাধান নেওয়া হবে।”
আরও পড়ুন:








