সোমবার

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট : ২০১ পদের মধ্যে ১১১টি শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:৫৮

আপডেট: ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:১৪

শেয়ার

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট : ২০১ পদের মধ্যে ১১১টি শূন্য
ছবি সংগৃহীত

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে জনবল সংকটের এক দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ বাস্তবতা। ৫০ শয্যার এ সরকারি হাসপাতালটিতে অনুমোদিত ২০১টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৯০ জন। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী প্রতিদিন ভোগছেন চরম ভোগান্তিতে।

১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটি ২০০৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, এরপর থেকে জনবল কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। ২০১০ সালের পর থেকে কোনো নিয়মিত নিয়োগ হয়নি। অথচ প্রতিদিন এখানে গড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।

এ হাসপাতালে বর্তমানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও স্বাস্থ্য সহকারীর অভাব প্রকট। যার ফলে চিকিৎসক ও কর্মীদের একাধিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে করে সেবার মান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি কর্মীদের মধ্যেও ক্লান্তি ও মনোবল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

রোগীরা অভিযোগ করেছেন, সকাল থেকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বেডের ঘাটতি, জরুরি ওষুধ সংকট এবং পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় রোগী সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের অভ্যন্তর ও বাইরের পরিবেশে রয়েছে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা। পেছনের অংশে আবর্জনার স্তূপ, অপরিষ্কার টয়লেট এবং মশার উপদ্রবসব মিলিয়ে রুগ্ণ পরিবেশে রোগীদের থাকতে হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণেই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমও বিঘ্নিত হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকলিমা জাহান বলেন,

আমরা অল্প জনবল নিয়ে প্রতিদিন কয়েক শত রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে সম্ভব নয়। আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত নিয়োগ না হলে সংকট আরও বাড়বে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল বলেন, শাহরাস্তির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা যদি ভেঙে পড়ে, তাহলে তা পুরো জেলার ওপর প্রভাব ফেলবে। তারা শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ, নার্স বৃদ্ধি এবং পরিবেশ উন্নয়নের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্লেষণ ও সুপারিশ

দীর্ঘদিনের এই সংকট নিরসনে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অস্থায়ী নিয়োগ কিংবা কনট্রাকচুয়াল ভিত্তিতে জনবল সরবরাহ জরুরি। পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে রোগীর জন্য মানবিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে জরুরি পদগুলোর তালিকা করে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।

একটি হাসপাতাল কেবল ভবন নয়, এটি একটি জীবন্ত সেবাকেন্দ্র। জনবল সংকটের নামে এ সেবাকেন্দ্র যেন অকার্যকর না হয়ে পড়েসেদিকে এখনই নজর দেওয়া জরুরি।



আরও পড়ুন:

banner close
banner close