মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

খরচ দ্বিগুণ বাড়লেও কেরু বিএমআর প্রকল্পের দুই বছরের কাজ শেষ হয়নি ১৩ বছরেও

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি  

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৯:৩০

শেয়ার

খরচ দ্বিগুণ বাড়লেও কেরু বিএমআর প্রকল্পের দুই বছরের কাজ শেষ হয়নি ১৩ বছরেও
ছবি সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত ৮৭ বছরের পুরনো কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকলকে আধুনিকায়ন, আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে ২০১২ সালে ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তবে দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য নেওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়নি ১৩ বছরেও।

জানা গেছে, ২০১২ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কাজ ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিলো। তবে বিভিন্ন জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। ফলে প্রকল্পটির মেয়াদ একের পর এক বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে, সর্বশেষ মেয়াদ ছিল জুন ২০২৫ পর্যন্ত।

তবে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর বাড়িয়ে মেয়াদ জুন ২০২৬ পর্যন্ত করার প্রস্তাব গত ১৭ আগস্ট একনেক সভায় তোলা হলে প্রকল্পটির মেয়াদ ষষ্ঠবারের মতো বাড়ানো হয়। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে প্রকল্প খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাড়িয়েছে ১০২ কোটি টাকায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সুগার ইউনিট প্রতিস্থাপন, চিনিকলটির আখ মাড়াই, চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রসেস লস ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল।

দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু দুই বছরে কাজ শেষ না হলে পরে সংশোধন করে এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তাতেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। এরপর দেড় বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

তারপরও কাজ শেষ না হওয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আবার সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবটি পাঠানো হলে তা যাচাই করতে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করা হলে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধন করে পাঠানো হলে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন এক লাফে সাড়ে তিন বছর সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়। একই সঙ্গে খরচ দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে ধরা হয় ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা। কিন্তু তাতেও শেষ হয়নি প্রকল্পের পুরো কাজ।

এরপর প্রতিবছর সংশোধন করে প্রতিবারে এক বছর করে সময় বাড়ানো হয়; যার সর্বশেষ মেয়াদ ছিল ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। এভাবে প্রকল্পটির মেয়াদ একের পর এক বাড়ানো হয়েছে। এই ১৩ বছরে খরচ করা হয়েছে ৮০ কোটি টাকা।

তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় পুণ:স্থাপিত যন্ত্রপাতি চালিয়ে গত ১৫ থেকে ১৬ মার্চ শুধু ওয়াটার ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বুঝা যায় আখ মাড়াই তথা চিনি উৎপাদনের জন্য ৫০ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। তাই বাকি কাজ শেষ করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আবার উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে আইএমইডির মতামত নিতে বলা হয়।

আইএমইডি তার মতামতে বলেছে, প্রকল্পটি দীর্ঘদিন থেকে চলমান। কিন্তু কাজ শেষ পর্যায়ে। তাই বাকি কাজ শেষ করার জন্য এক বছর সময় বাড়ানো যেতে পারে। এরপর আর সময় বাড়ানো যাবে না। একই সঙ্গে কোনো খরচও বাড়ানো যাবে না।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকল্পটিতে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের প্রায় সব কাজ শেষ হলেও গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আসেননি। ফলে প্রোডাকশন ট্রায়াল রান সম্ভব হয়নি। এ কারণে সময় বাড়ানো ছাড়া বিকল্প ছিল না।

এ প্রসঙ্গে কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের সঙ্গে আমরা কেও সংশ্লিষ্ট নই। বিস্তারিত জানতে প্রজেক্ট ডাইরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করেন।

জানতে চাইলে কেরুর বিএমআর প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ফিদা হোসেন বাদশা বলেন, মূলত ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়। শুরুতে এটা আংশিক করার কথা ছিলো কিন্তু বিএসএফআইসি মনে করে যে কমপ্লিট একটা মিল হাউজ করা যেতে পারে। যার জন্য প্রজেক্ট রিভিশন হয়। ফলে কিছু কাজ বাকি থাকতে প্রজেক্ট বন্ধ থাকে। আর রিভিশনে ৩ বছর সময় ব্যায় হয়। একইসাথে ২০১৯ সালে প্রজেক্ট ব্যায় দাঁড়ায় ১০২ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, এরপরে যখন মিল চলে তখন কাজ বন্ধ থাকে। এরপর কভিড কালীন সময়ে লং টাইম কাজ বন্ধ ছিলো। ওই সময় মালামাল আনা বন্ধ ছিলো। এছাড়া ওয়ার্কাররা বেশিরভাগ ভারতীয়। এরপর ২২, ২৩ ও ২৪ সালে বেশিরেকাজ শেষ হয়েছে। দুই একটি জিনিসের জন্য ফুল ট্রায়ালে যেতে পারেনি। ওয়াটার ট্রায়াল কমপ্লিট আছে। ট্রায়াল রানের জন্য ১ বছর সময় বেড়েছে। এবছর প্রডাকশনে যেতে পারবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেরুর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এক যুগে কেরু এন্ড কোম্পানির আধুনিকায়নের কাজ শেষ না হলেও অন্য কাজ কিন্তু বন্ধ হয়নি। ফলে বিপুল রাজস্ব আদায় হচ্ছে।'

উল্লেখ্য, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মূল পণ্য চিনি হলেও আখ থেকে চিনি নিষ্কাশনের পর বাইপ্রোডাক্ট- মোলাসেস থেকে তৈরি করা হয় ভিনেগার, দেশি ও বিদেশি মদ ও জৈব সার। চিনি বিভাগ বছরের পর বছর লোকসান গুনলেও অন্যান্য ইউনিট থেকে ধারাবাহিকভাবে লাভ করছে কেরু এন্ড কোং। যা থেকে সরকার আয় করছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।



banner close
banner close