বৃহস্পতিবার

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৩ পৌষ, ১৪৩২

অশ্রু আর ক্ষোভে পালিত হলো রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস; আট বছর পরও অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট, ২০২৫ ১৬:২৭

শেয়ার

অশ্রু আর ক্ষোভে পালিত হলো রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস; আট বছর পরও অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন
ছবি বাংলা এডিশন

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সোমবার সকাল থেকে বুকভরা ক্ষোভ ও চোখভরা অশ্রুতে মুখর হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালের ভয়াল দিনটিকে স্মরণ করে লাখো রোহিঙ্গা পালন করল 'রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস-২০২৫'। তারা দাবি জানালেন নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের।

সকাল ১০টার পর থেকে উখিয়ার কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পের ফুটবল মাঠ, ৯ নম্বর ক্যাম্পের বালুর মাঠসহ অন্তত সাতটি ক্যাম্পে একযোগে আয়োজিত হয় সমাবেশ। হাতে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে নারী-পুরুষ-শিশুসহ হাজারো রোহিঙ্গা সমবেত হন। উই ওয়ান্ট জাস্টিস, গণহত্যা বন্ধ করো ধ্বনিতে ক্যাম্পগুলো প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

স্মৃতিতে রক্তাক্ত আগস্ট: ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মগ বাহিনী যৌথভাবে রোহিঙ্গাদের গ্রামজুড়ে অগ্নিসংযোগ, নির্বিচারে হত্যা ও নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। মুহূর্তেই হাজারো মানুষ নিহত হয়, নারীরা ধর্ষণের শিকার হয় এবং প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেই ভয়াল স্মৃতিই রোহিঙ্গাদের কাছে আজও রক্তাক্ত ইতিহাস।

ক্যাম্প-৯ এর সমাবেশে নেতৃত্ব দেন এফডিএমএন নেতা মাস্টার সাদেক ও আরএসও নেতা মৌলভী নূর। উপস্থিত ছিলেন মাঝি আবদুল আমিন, আরসা নেতা ডা. জুবায়ের, মুফতী আনিসসহ রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রভাবশালী নেতারা। বক্তারা অভিযোগ করেন, মিয়ানমার সেনারা আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করেছে। রাখাইনে এখনো দ্বিতীয় দফায় গণহত্যা চলছে-এবার আরাকান আর্মির দখলে।

প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা: রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, আট বছরে একজনকেও স্বদেশে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। উল্টো রাখাইনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ১৯ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি শামসুল আলম বলেন, আমাদের পরিবার খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে আসছে। নাগরিক অধিকার আর নিরাপত্তা ছাড়া আমরা ফিরতে চাই না।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে ও আইসিসি) বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা কামনা করছে।

আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান: উখিয়ার ক্যাম্পগুলো থেকে একযোগে দেওয়া হয় মানবিক আবেদন। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এই দেশে অনির্দিষ্টকাল থাকতে চাই না। মিয়ানমার আমাদের দেশ অনতিবিলম্বে আমাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তারা জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ সকল দাতা সংস্থাগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান।

দোয়া ও স্মরণ: সমাবেশ শেষে নিহত রোহিঙ্গাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মোলভী জুবায়ের।

রোহিঙ্গাদের ভাষায়, এটি কেবল একটি স্মরণ নয়-বরং টিকে থাকার সংগ্রামে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা জাগানোর শেষ চেষ্টাও। আট বছর পেরিয়ে গেলেও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় আজকের এই দিনটি হয়ে উঠেছে তাদের কাছে শোক, ক্ষোভ ও প্রতিরোধের প্রতীক।



banner close
banner close