চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হলো ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু জনবল সংকট, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, দুর্নীতি, খাদ্যে অনিয়ম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ হাসপাতাল এখন রুগ্ন অবস্থায়। রোগীরা সেবার চেয়ে ভোগান্তিই বেশি পাচ্ছেন। কারণ হিসেবে দেখা গেছে ডাক্তার সংকট।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫টি অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৩ জন। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে রেডিওলজি চিকিৎসকের পদ শূন্য পড়ে আছে। সিনিয়র কনসালটেন্ট, চক্ষু কনসালটেন্ট, জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজি)সহ মোট ২২টি পদ শূন্য। এছাড়া ৮ জন চিকিৎসক প্রেষণে অন্যত্র থাকায় চিকিৎসা সেবা আরও ব্যাহত হচ্ছে।
শুধু চিকিৎসকই নয়, নার্স, মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, সুইপার ও সাপোর্ট স্টাফের একাধিক পদও দীর্ঘদিন ধরে খালি। অনেক চিকিৎসক অফিস সময়ে হাসপাতালে না থেকে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখেন বলে অভিযোগ আছে।
প্রতিমাসে বহির্বিভাগে ৬–১০ হাজার, আন্তঃবিভাগে ৭০০–১০০০ এবং জরুরি বিভাগে ২–৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে সেবা কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাচ্ছে না। রোগীদের অভিযোগ বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে তাদের নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বলা হয়। ফলে দালাল ও প্রাইভেট হাসপাতালের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।
হাসপাতালের খাবার বরাদ্দ মাথাপিছু ১৭৫ টাকা হলেও রোগীরা মানসম্মত খাবার পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ ১৫–২০ বছর ধরে একই ঠিকাদার অনিয়মের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহের কাজ বাগিয়ে রেখেছেন।
হাসপাতালের এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন বহুদিন ধরে অকেজো। অ্যাম্বুলেন্স আছে মাত্র একটি, সেটিও নষ্ট হয়ে যায় প্রায়ই। লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে জরুরি সময়ে চিকিৎসা ব্যাহত হয়।
উপজেলা সদরের নাকের ডগায় ও বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রায় ডজন খানেক প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো লাইসেন্স। অনেক ক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট ছাড়াই রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে। আবার অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক অনিবন্ধিত থেকেও চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান না থাকায় সাধারণ রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমা আক্তার স্বীকার করেন, চিকিৎসক সংকট এবং বায়োমেট্রিক যন্ত্র বিকল থাকার কারণে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হচ্ছে। তিনি জানান, নতুন জনবল নিয়োগ ও অন্তত একটি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। ডাক্তার সংকট সমস্যার সমাধান হলে আমাদের সেবার পরিধি আরও বাড়বে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, বাঁশখালীর ৭ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা আজ ভয়াবহ সংকটে। হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি ল্যাব, ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকগুলোতেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না গেলে এ সংকট কাটানো সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন:








