কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মো. আনোয়ারুল কবীরের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তিনটি পদে মোট ২৪ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির করছেন। টাকার বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তিনি। এনিয়ে কুষ্টিয়ার সচেতন মহলে চলছে নানা সমালোচনা।
নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়া, তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে চাকরিপ্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধারা। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ সুপার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
শনিবার ও রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া পৌরসভার হাউজিং এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ মানববন্ধন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি প্রার্থী আব্দুল ওহাব বলেন, শুক্রবারে নিয়োগ পরিক্ষায় অনিয়ম দুর্নীতি করা হয়েছে। পরিচালক আনোয়ারুল কবীর ও হিসাবরক্ষক আনোয়ার টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বানিজ্য করেছে। আওয়ামী লীগের আমলে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া ওয়ার্ড মাস্টার তানভীর সহ বেশ কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়ার জন্য পরিচালক উঠে পড়ে লেগেছে। তানভীর সহ আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত ৮ জন হিসাবরক্ষকের আত্মীয় স্বজন। পরিক্ষার আগেরদিন দফায় দফায় তাদের সাথে দেখা, সাক্ষাৎ ও মিটিং করেছে পরিচালক আনোয়ারুল। তারা টাকার বিনিময়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করছে। আমরা তাদের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পুনরায় নিয়োগ পরিক্ষার দাবি জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে আবু হানিফ বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে মাস্টার রোলে কর্মরত ৮ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বানিজ্য করেছে পরিচালক আনোয়ারুল। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন তাদের মাধ্যমেই ছাপানো হয়েছে, পরীক্ষার খাতাও তারা দেখছে। তাদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে নিয়োগ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে পরিচালক ও হিসাবরক্ষক। আমরা আন্দোলন করে স্বৈরাচারীর পতন করেছি। আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। আমরা বৈষম্যর শিকার। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল একজন আওয়ামী লীগের দালাল। আর যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তারাও আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে তারা অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করছে সে। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তদন্ত করে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন করবো।
মানববন্ধনে সুজন ফরাজি বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য করা হচ্ছে৷ এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার দাবি জানাচ্ছি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো লিখিত অভিযোগে চাকরিপ্রার্থীরা উল্লেখ করেছেন, গত ২২ আগস্ট কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রমান পাওয়া গেছে। মেডিকেল কলেজে অনিয়মিত আউটসোর্সিং এ কর্মরতদের এই সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ দেওয়ার স্বার্থে পরিচালক ও হিসাবরক্ষকের যোগসাজসে দুর্নীতি করছেন। পরীক্ষার পূর্বের দিন সকালে পরিচালকের অফিস রুমে ও তার পাশে একটি কক্ষে আউটসোর্সিং এ অস্থায়ীভাবে যারা কর্মরত আছে তাদের মধ্যে থেকে ৪ জনের সাথে পরিচালকের আলোচনা হয় এবং এই ৪ জনের সকলেই নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থী। পরীক্ষার পূর্বের দিন কোন প্রার্থীদের সাথে পরিচালক কোনভাবেই এভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার আলোচনা করতে পারেন না।
এই চার জনের মধ্যে তানভীর আহম্মেদ অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটরের প্রার্থী ও হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে ওয়ার্ড মাস্টার পদে কর্মরত আছে। সে হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেনের ভাগ্নে। আবির ইসলাম অফিস সহায়ক প্রার্থী এবং বর্তমানে অনিয়মিত শ্রমিক পদে কর্মরত, সাঈদ হাসান অফিস সহায়ক প্রার্থী এবং বর্তমানে অনিয়মিত শ্রমিক, অনুপ কুমার অফিস সহায়ক প্রার্থী ও ওয়ার্ড মাস্টার হিসেবে কর্মরত। এসময় আরও কয়েকজন চাকরী প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পরিচালক ও হিসাবরক্ষক তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে অর্থ নিয়ে চাকুরী প্রদানের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা তানভীর, আবির, সাঈদ, অনুপ, সুজন, মেঘলা, রোকনুজ্জামান ও জুথী খাতুনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়ার জন্য হাসপাতালের পরিচালক এবং হিসাবরক্ষকের নিয়োগ বনিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন।
পরীক্ষার দিন জিলা স্কুলের ১১২ নম্বর রুমে পরিচালক ও হিসাবরক্ষক তানভীর আহম্মেদকে কয়েকবার তার রুমে গিয়ে উত্তরপত্রে লিখতে সহযোগিতা করেন। জিলা স্কুলে যার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। আরও অভিযোগ আছে উপরোল্লিখিত আউটসোর্সিং এ চাকুরীরত এবং এই পরীক্ষার প্রার্থী তাদের মাধ্যমে পরীক্ষার উত্তর পত্র দেখানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুনভাবে পরীক্ষা গ্রহণ এবং পরিচালক ও হিসাবরক্ষকসহ ও অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, টাকার বিনিময়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগ বানিজ্য করেছে। স্বার্থের কারণে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলে আউটসোর্সিংয়ে যারা অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিল, টাকার বিনিময়ে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়া হোক। পরিচালক ও হিসাব রক্ষকের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন করবো।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডাঃ মো. আনোয়ারুল কবীর বলেন, আমরা নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ করেছি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ মনগড়া, মিথ্যাও ভিত্তিহীন। কোনো চাকরি প্রার্থীর কাছে থেকে টাকাপয়সা নেয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, ইন্সট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার ও অফিস সহায়ক পদে ২৪টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গত ২৪ মে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচ হাজার জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিন হাজার প্রার্থী।
আরও পড়ুন:








