শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

বরখাস্ত এসআইকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:১৫

শেয়ার

বরখাস্ত এসআইকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে বরখাস্ত হওয়া পুলিশের এক উপপরিদর্শককে (এসআই) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর ভদ্রার হজের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গণপিটুনির শিকার সাবেক এসআইয়ের নাম মাহবুব হাসান। তার বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে হয়রানি, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের বহু অভিযোগ রয়েছে। রাতে গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে তুলে দেওয়ার সময় পরিস্থিতি শান্ত করেন জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার ও ছাত্রশিবিরের মহানগরের সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম।

এ সময় জসিম উদ্দিন উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতাকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এ সেই হাসান, যে মানুষকে কখনো গাঁজা, কখনো হেরোইন, কখনো ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠাত। আমার সামনে সাক্ষী সোহাগ আছে, এ সোহাগকে মারতে মারতে উলঙ্গ করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে। আমাদের রাতুলকেও মেরে আহত করে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। ৫ তারিখের পর মানুষের কথা বলার সুযোগ হয়েছে, কথা বলছে। এ অপরাধী ঘাপটি মেরে এ শহরে অবস্থান করছিল।

তিনি আরও বলেন, হাসান অসংখ্য বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে হত্যার আসামি। আমাদের আফসোস লাগে, ধিক্কার জানাই ওই ব্যবস্থাপনাকে যারা দেখার পরও হাসানকে গ্রেপ্তার করছিল না। বিএনপি-জামায়াত এবং সাধারণ মানুষ থানায় গিয়ে এবং তার বাড়িতে গিয়ে জনতা তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাকে আগামী দিনে আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

জানা গেছে, হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৩ সালে এসআই নিয়োগে তার চাকরি হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি রাজশাহী নগরের মতিহার থানায় ছিলেন। পরে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যোগদান করেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই অত্যন্ত বেপরোয়া ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ করতেন হাসান। পরে দলীয় প্রভাবে পুলিশে চাকরি নেন এবং ডিবিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালান। নিজেকে ‘অপরাজেয়’ভাবা হাসান রাজশাহীতে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জখম ও পঙ্গু করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামকে আটক করে অস্ত্রসহ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষকেও চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। এসব অপকর্মের মাধ্যমে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। রাজশাহীর সাংবাদিক রাজিব আলী রাতুল ছিলেন এমন এক ভুক্তভোগী। তাকেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ আছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতুলের বাবা মাসুদ রানা এসআই হাসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তৎকালীন এসআই মাহবুব হাসান সাদা পোশাকে নগরের রেলগেট এলাকায় মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে রাজীব আলীর মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে শিমলা বাগানে তুলে নিয়ে যান। এরপর মাসুদ রানাকে ফোন করে জানানো হয়, তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে রাজীবকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। টাকা নিয়ে শিমলা বাগানে ছুটে গেলে মাসুদ রানাকে ওই টাকাই হাসানের হাতে তুলে দিতে হয়।

এ সময় হাসান আশ্বাস দেন, রাজীবকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু পরদিন তাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ মামলায় দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ করেন রাজীব। জামিন পাওয়ার পর এসআই হাসানের সঙ্গে দেখা হলে রাজীব টাকা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন হাসান ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং হুমকি দেন—তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করেছেন, টাকা চাইলে এবার মেরেই ফেলা হবে।

নগরের চন্দ্রিমা থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, গ্রেপ্তারের পর হাসানকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমাদের থানায় তার নামে মামলা নেই। তাই তাকে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের কাছে হাসপাতালেই হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে।

বোয়ালিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাসানের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির একটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে ডিবি হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেটিতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) ও নগর পুলিশের মুখপাত্র মো. গাজিউর রহমান বলেন, মাহবুব হাসান সর্বশেষ নগর ডিবিতে ছিলেন। তারপরই তিনি বরখাস্ত হয়েছেন। তার বিষয়ে আমি বিস্তারিত এখনো জানি না।



banner close
banner close