নানা অভিযোগে স্থগিত হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক এবং সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন একই কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর রহমান অনিক।
সংগঠনটির জেলা কমিটির নেতাদের নিজেদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে দুই শীর্ষ নেতার চাঁদাবাজি নিয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন তানভীর রহমান অনিক। ম্যাসেঞ্জারে কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশর্ট এসেছে বাংলা এডিশনের হাতে। একাধিক সুত্র স্ক্রিনশর্ট গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আসলাম অর্ককে নিয়ে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের কথোপকথনে তানভির লেখেন, কমিটি হওয়ার পর থেকেই জনাব অর্কের একটাই কথা ছিলো ইনকাম করতে হবে। আমাকে অনেকবার অনেক কিছু বলেছে। প্রথম দিন শোনার পর আমার মনে হয়েছিলো যে ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি লেখেন, এরপর যতদিন কথা বলেছি একটাই কথা ইনকাম। এসিল্যান্ড ঘুষ খাচ্ছে ওনাকে বলে দিয়ে খেতে। ইউএনও ঘুষ খাচ্ছে ওনাকে বলে দিয়ে খেতে। বিএনপি আওয়ামী লীগের থেকে টাকা নিচ্ছে। তুমিও নাও, আমাকেও দাও। কেরুতে ইনকামের রাস্তা বের করে দেন। না পারলে আপনারা সরে যান। আমরা আমাদের মতো লোক দেব।
সাফফাতুল ইসলামকে নিয়ে তানভির লেখেন, সাফফাত আমার দর্শনায় আমাদের উপর হামলাকারী একজনের কাছে ৫ লক্ষ টাকা চেয়েছিলো। সে আবার রেকর্ড করে আরেকজনকে দিয়েছে। আর বাকি জিনিস তো আছেই।
তিনি আরও লেখেন, আমার সাথে কল দিয়ে খারাপ ব্যাবহার করেছিলো কেন কেরুতে তাদেত একসেস দেই না। না দিয়েই এতো কিছু। দিলে তো আমার ইমেজ আর পু*কি দুটোই মারা হয়ে যেতো।
আরেক ম্যসেজে তানভির লেখেন, আমাদের বোকা বানিয়ে যারা টাকা খেলো তারা এলাকায় চিটার বাটপার হিসেবে চিহ্নিত হোক। তারা প্রতি পদে পদে লাঞ্ছিত হোক। যারা বালির ট্রাক আটকিয়ে টাকা নিলো তাদের কবর পানিতে হোক। যারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নিলো তারা প্রতি পদে পদে প্রতারিত হোক। জুলাইকে বেঁচে যারা ভাতা তুলে খাবে তাদের আল্লাহ এমন অষুখ দিক ওই টাকা যেন তার কম পড়ে।
অপর এক ম্যসেজে তিনি লেখেন, সবাইকে দর্শনায় ঘুরে যাওয়ার দাওয়াত রইলো। সবাই মিলে এসেন। বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির, আওয়ামী লীগের মধ্যে অপরাধ না করা লোক। সবাইকে নিয়ে একসাথে চা খাওয়াবো। যেখানে যারা যা করলো তার হিসেব দিতে হবে।
আমাদেরকে কমিটিতে নিয়ে ব্যবহার করার ফল ভোগ করা লাগবে। আর ওপেন বলে রাখলাম। এই বাটপারদের দর্শনার যেখানেই দেখা যাবে দর্শনার ভাইয়েরা পিটাবে।
ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে কথোপকথনের সত্যতা নিশ্চিত করে তানভির রহমান অনিক বাংলা এডিশনকে বলেন, শুধু তাই নয়, জুলাই অভ্যুত্থানে চুয়াডাঙ্গায় যে ৪৬ জন ১ লক্ষ টাকা করে পেয়েছেন সেখানেও অনিয়ম হয়েছে। এই ৪৬ সামনে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। তারা এমন কোনো কিছুই করেনাই তারপরেও তারা টাকা পাবে।
ওদেরকে আসলাম অর্কই মনোনীত করেছেন। যাদের অনেককেই আমরা সরাসরি আন্দোলনে ছিলো না। এমনকি আমরা অনেককেই দেখিনি। এটা জুলাই আন্দোলনের সাথে বেঈমানি করা হলো।
তিনি আরও বলেন, যে কমিটিতে আমি ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সেখানে আমার মতামত নেয়া হয়নি। এমনকি আমি জানতামই না। জুলাই যোদ্ধা নির্বাচনে আসলাম অর্কের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো। সে ডিসির সাথে মিলে ওই লিস্ট করেছে। এখানে আমাদের নিজেদের মধ্যেই অনেক বিতর্ক রয়েছে। এসব বিষয়ে আমিই প্রতিবাদ করেছি। যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্যা না তারা ভাতা প্রলে এটা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেয়ার মতো হবে।
দুই নেতার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে একই কমিটির সদস্য সাব্বির হোসাইন বলেন, আমরা কমিটিতে থাকলেও মূল্যায়ন হয়নি। আসলাম অর্কের কথাই শেষ কথা ছিল। কোনো বিষয়েই আমাদের মতামত নেয়া হতো না, শুধু গ্রুপে জানাতো এটা হচ্ছে বা হবে।
তিনি বলেন, একটা সিন্ডিকেট ছিলো চারপাঁচ জনের। জেলার বিভিন্ন কমিটিতে তারাই থাকতেন বা আছেন। সেখানে আমাদের কোনো স্থান নেই, তাহলে তো বৈষম্য থেকেই গেল। কেরুরু শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধ করে এই কমিটির নেতারা, নিশ্চই সেখানে কোনো না কোনো স্বার্থ ছিলো তাই না?
এই যে সিভিল সার্জনে অফিসে হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটা বিতর্কিত নিয়োগ হলো সেখানে তার নিরব ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। ওনার নিরব ভূমিকা কি প্রমাণ করে না যে উনি অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেননি?
আক্ষেপ করে সাব্বির আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গায় আহত জুলাই যোদ্ধার তালিকায় আসলাম অর্ক নিজেও আছেন। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছে বা চরম ভাবে নির্যাতিত হয়ে আহত হয়েছেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তার মিস গাইডের কারণে ৪ আগস্ট অনেকেই হামলার স্বীকার হন। আর তিনি পালিয়ে যান, এই হলো জুলাই যোদ্ধা। জুলাইকে পুঁজি করে ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিল করছেন তিনি, যেটা জুলাইকে বিক্রি করার সমান।
এদিকে কেরুর চিনির ডিলারশীপ নিতে সাফফাতুলের ১ লাখ টাকা দাবির অভিযোগ করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম নিরব।
এক অডিওতে তিনি বলেন, আমরা কেরুর চিনির ডিলারশীপ নিতে চাই। এ ব্যাপারে শাফফাতুলের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন ডিলারশীপ নিতে হলে ১ লক্ষ টাকা লাগবে। আর সেটি নিবেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (সদ্য বিদায়ী) চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র। পরবর্তীতে সজিব নামে একজনের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সেই টাকা সাফফাতুলকে দিয়। সে বলে ১ মাসের মধ্যে সব হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কাজও হয়নি টাকাও ফেরত দিচ্ছে না সাফফাতুল।
এসব অভিযগের বিষয়ে জানতে আসলাম অর্ক ও সাফফাতুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা করেছে। ওই দিন সন্ধ্যায় শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ।
আরও পড়ুন:








