শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

মওলানা ভাসানী সেতু নয়, বরং তিস্তা সেতু নামেই নামকরণ চায় এলাকাবাসী

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট, ২০২৫ ২১:৫৩

শেয়ার

মওলানা ভাসানী সেতু নয়, বরং তিস্তা সেতু নামেই নামকরণ চায় এলাকাবাসী
ছবি: বাংলা এডিশন

উত্তরের নদীবেষ্টিত গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে তিস্তা নদী পারাপারে খেয়ার ওপর ভরসা করতেন। বর্ষার সময়ে দেড় কিলোমিটার বিস্তৃত নদী পার হওয়া ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, আর সন্ধ্যায় খেয়া বন্ধ থাকায় রাত কাটানো স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এই দীর্ঘ দিনের কষ্ট ও অসুবিধা কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। সেতুটি আগামী ২০ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত হবে। ইতিমধ্যে সেতুর জন্য ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’ নামকরণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে নামটি পরিবর্তন করে নদীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নামকরণ করার দাবি উঠেছে।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, সরকারি নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’নয়, নদীর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কারণে এটি ‘তিস্তা সেতু’নামেই নামকরণ করে বিশ্বের কাছে পরিচিত করা হোক।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বাস্তবায়ন করেছে দেশের সবচেয়ে বড় এ সেতু নির্মাণ প্রকল্প। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। পরে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড কাজ সম্পন্ন করে। প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার। এতে যাতায়াতের সময় সাশ্রয় হবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। শুধু গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম নয়, উত্তরাঞ্চলের আরও কয়েকটি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ হবে সহজ ও নির্বিঘ্ন।

ইতোমধ্যে সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালুর হওয়ার কথা ছিল। কয়েকদফা উদ্বোধনের তারিখ পরিবর্তন করে আগামী ২০ আগস্ট দুপুর ১২টায় সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান হিসেবে সেতুটির উদ্বোধন করবেন।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলে নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং সামগ্রিক অর্থনীতি গতিশীল হবে।

তবে ইতোমধ্যেই সেতুর নামকরণ নিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। গত ১০ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, 'গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাধীন পাঁচপীর বাজার-চিলমারী উপজেলা সদর দপ্তরের সাথে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটি ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’ নামে নামকরণ করা হলো।'

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী Saudi Fund For Development (SFD)-এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সেতুটি ‘মওলানা ভাসানী সেতু’নামে নামকরণের অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘তিস্তা শুধু নদী নয়, আমাদের জীবনের অংশ। সেতুর নামও তিস্তার নামেই হওয়া উচিত।’

স্থানীয় গৃহিণী রওশন আরা বেগম বলেন, ‘সেতু হলে যাতায়াত সহজ হবে, কিন্তু নাম নিয়ে রাজনীতি হোক আমরা চাই না। আমরা তিস্তা সেতু হিসেবেই নামকরণ চাই।’

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক এমদাদুল হক বলেন, 'যদি সেতুর নাম তিস্তা সেতু রাখা হয়, মানুষ সহজেই মনে রাখতে পারবে। নদীর নামের সঙ্গে সেতুর পরিচিতি যুক্ত হলে উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যও টিকে থাকবে।'

স্কুল ছাত্র আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'নতুন এই সেতু আমাদের যাতায়াত অনেক সহজ করবে। স্কুল, মাদ্রাসা এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ দ্রুত হবে। তবে আমরা চাই, এটি নদীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকার কারণে ‘তিস্তা সেতু’ নামেই পরিচিত হোক। এটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক হিসেবে থাকবে।'

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্কাউট সম্পাদক এম মাহফুজার রহমান লেলিন বলেন, 'সেতুটি এলাকায় যাতায়াত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপুল সুবিধা প্রদান করবে। এটি শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষসহ সকলের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করবে। তবে এটি মওলানা ভাসানী সেতু নয়; নদীর ইতিহাস, স্থানীয় সংস্কৃতি ও জনগণের অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে এই সেতুর নামকরণ অবশ্যই ‘তিস্তা সেতু’ নামেই হওয়া উচিত। নদীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু প্রজন্মের, আর এই নামকরণ স্থানীয়দের আবেগ ও গর্বের প্রতিফলন হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।



banner close
banner close