শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

চুয়াডাঙ্গায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:২০

শেয়ার

চুয়াডাঙ্গায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ
ছবি: প্রতিকি

চুয়াডাঙ্গায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। এর প্রধান কারণ- সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পরকীয়া প্রেম, একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব ও সাংসারিক দায়িত্বশীলতার অভাব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে জেলায় সর্বমোট বিয়ে হয়েছে ৮ হাজার ১০৬টি। আর বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৫২১টি। শতাংশ হিসেবে বিচ্ছেদ হয়েছে মোট বিয়ের প্রায় ৬৮ শতাংশ।

আর উপজেলা হিসেবে, গত বছর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বিয়ে হয়েছে ২২২৬টি আর বিচ্ছেদ হয়েছে ২১৭৭টি; আলমডাঙ্গায় বিয়ে হয়েছে ২৪৩১টি, বিচ্ছেদ হয়েছে ১২৩৭টি; দামুড়হুদায় বিয়ে হয়েছে ১৮২৮টি, বিচ্ছেদ হয়েছে ৯২১টি আর জীবননগরে বিয়ে হয়েছে ১৬২১টি, বিচ্ছেদ হয়েছে ১০৯৬টি।

উপজেলা ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ সবচেয়ে বেশি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায়। যেখানে বিয়ে ও বিচ্ছেদের সংখ্যার ব্যবধান মাত্র ৪৯টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের এক নারী জানান, দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। ১৪ মাসের মাথায় তাদের সংসার ভেঙে যায়। তার স্বামী অন্য কোনো নারীর সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। বিষয়টি জেনে যাওয়ার ফলে দাম্পত্য সম্পর্ক আর টিকে থাকেনি।

আলমডাঙ্গার উপজেলার এক প্রবাসী বলেন,‘আমি প্রবাসে থাকাকালীন স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায়। দেশে ফেরার পর জানতে পারি তার অন্য জায়গায় সম্পর্ক হয়েছে। এরকম সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর আমি বিচ্ছেদের পথে হাঁটি।’

মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রাররা বলছেন, বর্তমানে পরকীয়ার কারণে সবচে বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। এছাড়া সংসারে বনিবনা না হওয়া, স্বামীর দীর্ঘ প্রবাস জীবন ও পারস্পরিক অবিশ্বাসও দায়ী। অনেক দম্পতি সামান্য ভুল বোঝাবুঝি না মিটিয়ে বিচ্ছেদের পথে হাঁটছেন।

বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে আরেক বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার বলেন, তালাক বা বিচ্ছেদের পেছনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। এ ব্যাধি নিরাময় না হলে বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়তেই থাকবে।

তিনি আরও বলেন, পারিবারিকভাবে সম্পন্ন হওয়া বিবাহে তালাকের ঘটনা অনেকটায় কম। তাছাড়া দম্পতির মধ্যে কলহ সৃষ্টি হলে সেখানে দুই পরিবারের সহযোগিতা তা মেটাতে পারে। ছোটখাটো দাম্পত্য কলহ হলে দুজনই ছাড় দিয়ে বিষয়টির সমাধানের পথ বের করা উচিত।

আইনজীবীরা বলছেন, বিবাহ বিচ্ছেদ অপরাধ নয় বরং এটি দম্পতির মৌলিক অধিকার। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। তবে সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়া সমাজের জন্য উদ্বেগজনক।

তারা বলেন, তবে এ বিষযয়ে আইনি ও সামাজিক উভয় দিক বিবেচনা করতে হবে। পারিবারিক কলহ চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই মধ্যস্থতা, সালিশ বা পারিবারিক আলোচনার সুযোগ বেশি কাজে লাগানো উচিত। তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ কমবে।

তারা আরও বলেন, সামাজিক ভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে। তাছাড়া পারিবারিক সহযোগিতা, আর্থিক স্বচ্ছতা, সহমর্মিতা বিচ্ছেদ নামক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।

ম্যারেজ ও ডিভোর্স কনসালটেন্টরা বলছেন, বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে এবং বেকারত্ব। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে মানসিক ও আর্থিকভাবে সংসার পরিচালনায় অক্ষম থাকে। এতে করে দাম্পত্য জীবনে ভুল বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।



banner close
banner close