শুক্রবার

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াইয়ের পানি কমলেও, কষ্ট বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট, ২০২৫ ১২:৫৪

শেয়ার

কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াইয়ের পানি কমলেও, কষ্ট বেড়েছে পানিবন্দি মানুষের
ছবি: বাংলা এডিশন

ভারী বর্ষণ ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানির কারণে কুষ্টিয়ায় পদ্মা গড়াই নদীর পানি গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই হুহু করে বেড়েছে। এতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী চরাঞ্চল রামকৃষ্ণপুর চিলমারি সহ চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

প্লাবিত হয়েছে ওই এলাকার বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল ফসলি জমি। তবে শনিবার পদ্মা গড়াই নদীতে পানি কমেছে। পানি কমলেও চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি কষ্ট বেড়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়ার কারণে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। চরম মানবেতর কষ্টের জীবনযাপন করছে তারা৷

শনিবার (১৬ আগস্ট) পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২.৯৩ সেন্টিমিটার। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে এক সেন্টিমিটার কমেছে। এদিন গড়াই নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১১.২৬ সেন্টিমিটার। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তিন সেন্টিমিটার কমেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান।

ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানির প্রভাবে দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৫টি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন চরের ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী বহু রাস্তাঘাট স্কুল প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলের ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার তাদের গরু-মহিষ নিয়ে নিরাপদে সরে যাচ্ছে।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, হঠাৎ করে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। চরের ধান, মরিচ, পাট সহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল, ফসলের মাঠে পানি উঠে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় ওইসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি হালকা কমলেও ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে বন্যার্তদের।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, নদীর পানি বাড়ায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে এবং তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ২০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মরিচা, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর চিলমারী ইউনিয়নের দুই হাজার ৮০০ পরিবারের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ৮০০ পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নদীর পানি বাড়ার কারণে বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি স্কুল প্লাবিত হয়েছে। ১৬টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিম্ন অঞ্চলের প্রায় ৪৫টি থেকে ৫০টি গ্রামে পানি উঠেছে। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, আজ পদ্মা গড়াই নদীতে পানি কমেছে। ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে পদ্মা নদীতে এক সেন্টিমিটার পানি কমেছে আর গড়াই নদীর পানি কমেছে তিন সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা ঝুকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছি। আমরা সজাগ আছি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন।



banner close
banner close