সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর এলাকার পাথর সাবাড় করতে গিয়ে লুটেরা চক্র ধলাই নদীর উৎসমুখ দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে। তারা পর্যটন স্পটের মূল অংশের পাশে আরেকটি নৌপথ তৈরি করেছে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে নির্বিঘ্নে পরিবহন করতেই তারা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করেছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
সাদাপাথর পর্যটন স্পটের মূল অংশের পূর্বপাশে ভারতীয় সীমান্তের পাহাড়সংলগ্ন যে স্থান, যেখানে পাথর ও ঝিরিঝিরি পানি ছিল, সেই জায়গা এখন নদী হয়ে গেছে। যে জায়গায় কিছুদিন আগেও মানুষজন হেঁটে বেড়াতেন, সে জায়গায় এখন দিব্যি নৌকা চলে। গত শুক্রবারও ধলাই নদীর এই নতুন পথ দিয়ে লুট করা পাথর শ্রমিকদের নিয়ে যেতে দেখা যায়। ধলাই নদীর উৎসমুখ থেকে শুরু হওয়া নতুন এই নৌপথ রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) পয়েন্টের ঠিক পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে আবার ধলাই মূল নদী মিলেছে।
স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, সাদা পাথর পর্যটন স্পটের মূল অংশের পূর্বপাশে অসংখ্য পাথর ছিল। ফলে এদিকে কখনো নৌকা চলাচল করতে পারত না। সাদা পাথরে আসা পর্যটকরা এই পাথর ও ঝিরিঝিরি পানির মধ্যে হেঁটে বেড়াতেন। কিন্তু গত দুই মাসে সাদা পাথরের এই অংশের সব পাথর পাথরখেকোরা তুলে নিয়ে যায়। পাথর তোলার পাশাপাশি পুরো জায়গা খুঁড়ে দৃশ্যত আরেকটি নদীপথ তৈরি করেছে।
সাদাপাথর পর্যটকবাহী নৌকার মাঝিরা জানিয়েছেন, ধলাই নদীর মূল পথ দিয়ে পাথর নিয়ে গেলে অনেক সময় পাথর লুটেরাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ধলাই নদীর গতিপথই বদলে দিয়েছে এই অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট।
বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।
অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৯০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।
বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণ-লুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। বাংলা এডিশনের অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্য-সচিব আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’–
সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া এবং শাহ আরেফিন টিলা। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪/২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।
সিলেটে প্রতি ঘনফুট পাথর আকার ও ধরনভেদে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। লুটপাট করা পাথরের দাম প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। তবে কোনো হিসাব বা প্রাক্কলন পাওয়া যায়নি।
সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। বিগত ৫ বছরে তাঁরা নানাভাবে পাথর কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। গত ২৭ এপ্রিল দেশের ৫১টির মধ্যে ১৭টি কোয়ারির ইজারা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে আটটি সিলেটের। তবে রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) সংরক্ষিত এলাকা, পর্যটনকেন্দ্র ও কালাইরাগ এবং শাহ আরেফিন টিলা পাথর-বালু কোয়ারিগুলোর পাথর বালু একসঙ্গে লুট করে নেওয়া ঠেকানো যায়নি।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গত ২৪ জুন জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কোয়ারি ইজারার দাবিতে মানববন্ধন হয়। এতে যোগ দিয়ে একাত্মতা জানান সিলেটের বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ ছয় নেতা। তাঁরা হলেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগরের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম ও জেলার সেক্রেটারি আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
এর বাইরে বিভিন্ন সময় পাথর কোয়ারি চালুর পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীও গত ৯ জুলাই এক সভায় পাথর উত্তোলনের পক্ষে মত দেন। সিলেটের পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি বলেন, সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত।
সিলেটের পরিবেশকর্মীরা বলেছেন, রাজনীতিবিদদের এই অবস্থান পাথর লুটে উৎসাহ দিয়েছে। লুটপাটের পর নেতারা অবশ্য বলছেন, তাঁরা লুটের পক্ষে নন।
সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, কোয়ারি চালুর দাবির সঙ্গে লুটের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোয়ারি চালুর দাবি করেছি নীতিমালার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি লুটপাটকারী কাউকে প্রশ্রয় দেয় না।
সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীনের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট, প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এই জাতীয় সম্পদ (সাদাপাথর, রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) ও শাহ আরেফিন টিলা এবং কালাইরাগ) ধ্বংস হলো। প্রশাসনকে বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তারা জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, কোয়ারি চালুর দাবি আমরা যৌক্তিক কারণেই করেছি। আমরা পরিবেশসম্মতভাবে সনাতন পদ্ধতিতে কোয়ারি চালুর দাবি জানিয়েছি।
এনসিপি সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন শাহানের দাবি, পাথর কোয়ারির কিছু সংগঠন মানববন্ধনে সব দলকে দাওয়াত দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তবে যে লুটপাট হয়েছে, সেটাকে তাঁরা সমর্থন করেন না।
তারপরও ‘লুটপাট’–
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আ'লীগ সরকারের আমলেও স্থানীয় কিছু আ'লীগ নেতার মদদে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাথর ও বালু লুট করা হতো। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আ'লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটের সব কটি কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতারা। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে নিয়ে তাঁদের মদদেই প্রকাশ্যে পাথর লুট শুরু হয়।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পুলিশি কার্যক্রমের ঘাটতির সুযোগে জেলার প্রতিটি কোয়ারিতে পাথর লুট শুরু হয়। এ সময় গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি; কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, শাহ আরেফিন টিলা, রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) (রেলওয়ের পুরোনো স্থাপনা) এলাকা, কালাইরাগ ও উৎমা ছড়া এবং কানাইঘাটের লোভাছড়ার পাথর ও বালু অবৈধভাবে উত্তোলন শুরু হয়। এক বছর ধরে লুটপাটের কারণে এসব এলাকা এখন অনেকটাই পাথর ও বালুহীন।
অন্য সব জায়গায় পাথর বালু লুটিয়ে নিশ্চিহ্ন করার পর নজর পড়ে পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকায়। গত ২৩ এপ্রিল থেকে সেখানে লুটপাট শুরু হয়। তবে সেখানে বেশি লুটপাট হয়েছে বিগত এক মাসে।
সাদাপাথরে পাথর লুটপাটে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের ‘পরোক্ষ মদদ’ ছিল বলে অভিযোগ আছে। তাঁর অন্তত ১০ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও স্বজন সরাসরি লুটপাটে জড়িত। এ ঘটনায় গত সোমবার রাতে তাঁর সব দলীয় পদ স্থগিত করে বিএনপি। বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলেও স্থানীয় প্রশাসন সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে।
সাদাপাথর এলাকায় লুটপাটে মো.দুলাল মিয়া ওরফে দুলা (মেম্বার) নামের এক ব্যক্তি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক। সাদাপাথর-সংলগ্ন সংরক্ষিত রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু-পাথর তোলার অভিযোগে গত ১৪ জুলাই ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদ থেকে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় বিএনপি ও অন্যান্য সূত্র বলছে, লুটপাটে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রজন মিয়া, উপজেলা বিএনপির সভাপতি (গত সোমবার পদ স্থগিত হয়েছে) সাহাব উদ্দিনের বোনের জামাই ও যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন এবং তাঁর ভাই সাজন মিয়া, ছাত্রদলের কর্মী জাকির হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি (গত সোমবার পদ স্থগিত হয়েছে) সাহাব উদ্দিনের ‘ডান হাত’ নামে পরিচিত মোজাফর আলী, উপজেলা যুবদলের সদস্য জামাল আহমেদসহ বিএনপির অন্তত ১৫ জনের নাম এসেছে।
অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত মনির মিয়া (অন্য মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার), হাবিল মিয়া, সাইদুর রহমান ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী, ৩ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার কাজল সিং ( চাকুরিচ্যুত সেনা সদস্য) এবং সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আলোচিত শাহাবুদ্দিন ও তাঁর আত্মীয় স্বজনরা সাদাপাথর এলাকায় লুটপাটে জড়িত।
এদিকে কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ ধলাই বালুমহাল ইজারা নিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা ও ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে স্থানীয় মানুষ মানববন্ধন করছেন। গত মঙ্গলবারও সেতুর পাশে মানববন্ধন করা হয়। এ সময় অভিযোগ করা হয়, ইজারাবহির্ভূত স্থান থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করায় সেতুর ক্ষতি হচ্ছে।
বালুমহালটির ইজারাদার মো. আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। তাঁকে সহায়তা করেন উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ'লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আলোচিত আবদুল ওদুদ আলফু মিয়া চেয়ারম্যান এবং সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ।
যুবদল নেতা মকসুদ আহমদ বলেন, এটা অপপ্রচার। বালুমহালের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি, রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) এলাকা, সাদাপাথর ও কালাইরাগ এবং শাহ আরেফিন টিলা, উৎমা ছড়া থেকে অবৈধভাবে যেসব পাথর ও বালু উত্তোলন করা হয়, সেসব বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতসহ অন্যান্য দলের কোনো কোনো নেতার নৌকা, ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহন করা হয়। এসব পাথর ও বালু পরিবহন করে পাশের পাড়ুয়া, টুকের গাও, বুড়দেও, নয়াগাঙ্গের পাড়, ভোলাগঞ্জ, ১০ নম্বর সাইট, গুচ্ছগ্রাম, ডাকঘর, কালাইরাগ, দয়ারবাজার, কালীবাড়ি, কলাবাড়ি, ধুপাগুলসহ বিভিন্ন এলাকায় ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়। এ জন্য ভাড়া দেওয়া লাগে। জায়গা ভাড়া দেওয়া ব্যক্তিদের অনেকে বিএনপি ও জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
জমা করা পাথর পরে ক্রাশার মেশিনের (পাথর ভাঙার কল) মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। এসব কলের মালিকদেরও বেশির ভাগই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পাথর বিক্রির ব্যবসাও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণ করেন। সবাই লাভবান হন বলে সবাই পাথর উত্তোলনের পক্ষে।
পাথর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য আলোচিত হাজী কামাল, উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি (বহিস্কৃত) ও সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান আলোচিত লাল মিয়া, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন দুদু, জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক রুবেল আহমদ বাহার ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাকিম আহমদ ফরহাদ, শ্রমিক দলের বাদশা মিয়া এবং আ'লীগের কর্মী আলোচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও তাঁর বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী, বিলাল মিয়া, আলোচিত শাহাবুদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন উল্লেখযোগ্য।
সূত্র বলছে, জাফলংয়ে পাথর লুটপাটে মদদদাতাদের একজন জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান রয়েছেন। গত বছরের ১৪ অক্টোবর তাঁর দলীয় পদ স্থগিত হয়। নাম রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ মো.শাহ আলম ওরফে স্বপন, জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম (লুটপাটের অভিযোগে গত ৯ জুন বহিষ্কৃত), পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৩৫ জন নেতা-কর্মীরা।
পাথর লুটের ঘটনায় নাম আসা বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ আত্মগোপনে। যাঁরা আত্মগোপনে যাননি, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রজন মিয়া বলেন, সামনে যুবদলের কমিটি হবে। আমি সেক্রেটারি প্রার্থী। তাই প্রতিপক্ষ আমার নামে ভুলভাল ছড়াচ্ছে।
অবশ্য পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সবাই নিজের নামে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করবেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। কেউ জড়িত না থাকলে বিপুল পরিমাণ পাথর লুট করল কে?
জাফলং থেকে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালু ও পাথর তোলায় বিএনপির ৩১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর গত ২৫ মার্চ একটি মামলাও করেছে।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথরসহ কোম্পানীগঞ্জে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম আসার বিষয়টি তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সিলেটে এসেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবাবিষয়ক সহ-সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া (জুয়েল)। তিনি গত মঙ্গলবার সাদাপাথর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনের পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। দ্রুতই তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
পাথর লুট চলার মধ্যে গত ১৪ জুন জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তখন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সিলেটের কোনো কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না। অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
দুই উপদেষ্টা ফেরার পথে গোয়াইনঘাটের বল্লাঘাট এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতার নেতৃত্বে তাঁদের (দুই উপদেষ্টা) গাড়িবহরে বাধা দেন বালু-পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। তাঁরা বন্ধ থাকা জাফলংসহ সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো চালুর দাবিতে স্লোগান দেন। তবে উপদেষ্টারা চাপের মুখেও সিদ্ধান্ত পাল্টাননি।
এদিকে দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই প্রশাসন জেলার সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলায় ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করে। কয়েক'শ ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ তাঁরা বিচ্ছিন্ন করেন। এরপরই পরিবহন ও পাথর শ্রমিক পরিবহন ব্যানারে ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত ২ জুলাই বৈঠক করেন সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। এর পর থেকেই বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ এবং অবৈধ পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
"এখন জোর তৎপরতা"—
পাথর লুট চলাকালে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু অভিযান চালিয়েছে। সেসব অভিযানে বাধা দেওয়া এবং হামলার ঘটনাও ঘটেছে। তবে অভিযোগ আছে যে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, কেউ যদি বলেন লুটপাট ঠেকাতে প্রশাসন আন্তরিক নয়, এটা হবে দুঃখজনক। ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, করছি। সমস্যা হলো, অভিযান শেষে ফিরে এলেই আবার লুটপাট শুরু করে দেয় চক্রটি।
প্রশ্ন হলো-, কেন বড় ধরনের অভিযান ও পাথর লুট বন্ধে পাহারা বসানো হয়নি। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সেখানে সেনাবাহিনী যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আনসার, আরএনবি ও পুলিশ এবং র্যাব তো রয়েছে।
৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, এ জায়গা রেলওয়ে রোপওয়েটি (বাঙ্কার) ও সাদাপাথর এবং কালাইরাগ জেলা প্রশাসনের। তা রক্ষার দায়িত্বও জেলা প্রশাসনের। বিজিবির প্রধান কাজ সীমান্ত সুরক্ষা। এরপর চোরাচালান প্রতিরোধ, এরপর অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মিলে কাজ করা। সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ভেতরে কিছু হলে সেটা বিজিবি দেখভাল করে। খেয়াল করবেন, সাদাপাথর কিংবা জাফলংয়ে ১৫০ গজের ভেতরে কিন্তু পাথর লুটপাট হয়নি। তাঁরা সামর্থ্য অনুযায়ী গণ-লুট ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছেন। পাথর লুটপাটকারীদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে বিজিবি সদস্যরা আহতও হয়েছেন।
পুলিশও বলছে, তারা মামলা করেছে, অভিযান চালিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত বালু ও পাথর লুটপাটের ঘটনায় ১৯টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬০ জন। এ ছাড়া টাস্কফোর্সের অভিযানে গ্রেপ্তার হন আরও ৫২ জন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের অভিযোগে তারা ১২টি মামলা করেছে। এসব মামলার আসামি ১৯১ জন। গ্রেপ্তার একজন।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলো এখন নিজেরা কী কী করেছে, সেটার সাফাই তুলে ধরছে। আসল কথা হলো সমস্ত পাথর ও বালু লুট হয়ে গেছে এবং তারা তা ঠেকাতে পারেনি। বর্তমানেও উৎমা কোয়ারি ও উৎমা নদীতে পাথর-বালু এবং শাহ আরেফিন টিলায় পাথর লুট চলমান রয়েছে।
পাথর ও বালু লুটপাট নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলা এডিশন। বিগত কয়েক দিনে এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আলোচনা হয়। এরপর তৎপরতা বেড়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট দল বিষয়টি অনুসন্ধানে নেমেছে। গত বুধবার বেলা দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করে দোষীদের শনাক্তের কাজ করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফি মো. নাজমুস্ সাদাৎ। তিনি বলেন, লুটপাটে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রভাবশালী লোক, পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী জড়িত ছিলেন। এঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো নিষ্ক্রিয় ছিল অথবা তারা বাধা দেয়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সাদাপাথরে লুটপাটের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন গত মঙ্গলবার তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মা সেন সিংহকে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, নিয়মিতভাবে অভিযান চালিয়েও লুট ঠেকানো যায়নি। এখন সাদাপাথরে যা অবশিষ্ট আছে, সেটা কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা নির্ধারণে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকটি বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
"তাঁদের দুঃসময়"—
পাথর লুট করে অনেকে বিপুল টাকার মালিক হলেও বিপাকে পড়েছেন সাদাপাথর এলাকার পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। সেখানে দৈনিক ২৫ থেকে ২৬ হাজার পর্যটক যেতেন। ছুটির দিনগুলোতে এ সংখ্যা দিগুণ বেশি হতো। দোকানগুলোতে ভালো কেনাবেচা হতো। এখন সেটা কমে গেছে।
সাদাপাথর এলাকায় হাসান মিয়া (২৫) নিজের ঘোড়ায় পর্যটকদের চড়িয়ে ১০০ টাকা করে নেন। এতে প্রতিদিন তাঁর দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় হতো। তিনি বলেন, এখন আয় নেমেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এটা দিয়ে নিজের পরিবারের খরচ চলে না। তাঁর প্রশ্ন, ‘ঘোড়াকে খাওয়াব কী?
সেখানে কথা হয় কয়েকজন ক্যামেরাম্যনদের সঙ্গে তাঁরাও দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে আগে ছবি তুলে দৈনিক ১০০০ হাজার ১৫০০ শত টাকা ইনকাম করা যেতো, এখন ২০০ টাকাও ছবি তুলে ইনকাম করা সম্ভব হচ্ছে না, কথার মধ্যে দুইজন বলে উঠেন এখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসবে আশ্চর্য বিষয় এখন পর্যন্ত একটি টাকাও ছবি তুলে ইনকাম করতে পারিনি। জামিল নামে আরেক ফটোগ্রাফার বলেন আমরা কি করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলবো খুবই টেনশনে রয়েছি, গত ৫/৬ বছর থেকে এলাকার বেকার অনেক মানুষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু লুটেরাদের তাণ্ডবে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
"রাতারাতি পাথর আসবে না"—
সীমান্তের ওপারের পাহাড় থেকে পাথর এসে আবার সাদাপাথরে জমা হতে কত দিন লাগবে, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতারাতি এটা হবে না।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, অল্প সময়ে সব পাথর নিয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে। ভাঙন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর পর্যটকেরা তো ঘোলা পানি আর বালু দেখতে আসবেন না। তিনি আরও বলেন, পানির নিচের অংশটুকুতে হয়তো ধীরে ধীরে পাথর আসতে পারে। কিন্তু সাদাপাথরের পর্যটনকেন্দ্রে পাথর আগের অবস্থায় পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে।
আরও পড়ুন:








