শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

‘ডিজি হেলথের উসকানিতে মব সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট, ২০২৫ ২২:০৬

শেয়ার

‘ডিজি হেলথের উসকানিতে মব সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে’
ছবি সংগৃহীত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) উসকানিতে মব তৈরি করে শেবাচিম হাসপাতালে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকর্মী মহিউদ্দিন রনি। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের ওপর যতগুলো হামলা হয়েছে তার তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

মহিউদ্দিন রনি বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফদের ড্রেস পরিহিত একটা দল মব সৃষ্টি করে শান্তিপূর্ণভাবে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রত্যেকে মারাত্মকভাবে আহত হয়। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। খোঁজ পাচ্ছি না অনেকের।

তিনি বলেন, বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের এই দাবি অযৌক্তিক। কেউ আন্দোলন করলে প্রশাসন তাতে হস্তক্ষেপ করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উসকানিতে আজ এমন মবের সৃষ্টি করা হয়েছে। তার বক্তব্যের কারণেই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার ধিক্কার জানাই। ডিজি হেলথ একজন দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে বরিশালে এসে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে অসম্মান করেন, উসকানির মাধ্যমে মব সৃষ্টি করে এমন একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন।

রনি বলেন, যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাতে আমরা হতবাক হয়ে গেছি, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ডিজি হেলথ যে সুরে কথা বলেছেন সেই সুর আমাদের খুবই পরিচিত। ঠিক ২০২৪ সালে আমরা যেমনটা শুনেছি। আমরা কোনোভাবে এমন একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা চাইনি। যেজন্য রাস্তা ব্লকেডের পরিবর্তে গণঅনশনের ডাক দিয়েছিলাম। শান্তিপূর্ণভাবে অনশন করবো বলে মনোস্থির করেছি। কিন্তু আজকে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এখন আমাদের দাবি তিনটি নয়, আমাদের দাবি এখন চারটি। পূর্বঘোষিত তিনটি দাবির সাথে আরেকটি দাবি হলো- স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের এই গণমানুষের আন্দোলনে যতগুলো হামলা হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিটি হামলার বিচার চাই। চার দফা দাবি যতদিন পর্যন্ত না বাস্তবায়ন হবে, ততদিন পর্যন্ত কাউকে ভয় না পেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন হাসপাতালের কর্মচারীদের হামলায় আহত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। তারা ঘটনাটিকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে তদন্ত পূর্বক বিচার দাবি করেন।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিক্ষোভ, হামলা চালিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল থেকে বের করে দেন শেবাচিমের শিক্ষানবিশ ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। তাদের সাথে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ, হামলায় অংশ নেন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির বিপনন কর্মী, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাম্বুলেন্স মালিক-শ্রমিকরা বলে জানিয়েছেন হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মিড লেভেল ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সাখাওয়াত হোসেন জানান, স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদেরও পূর্ণ সমর্থন ছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দাবি মেনে নেন। এরপরও যারা আন্দোলন চালিয়ে চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে তাদের কারণে আমরা কর্ম পরিবেশ পাচ্ছি না। আন্দোলনকারীরা সারাক্ষণ হাসপাতালে রোগীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। তারা সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করে চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মানহানিকর শব্দচয়ন করছেন। তারপরও আন্দোলন যৌক্তিকতা থাকায় আমরা চুপ ছিলাম। কিন্তু মহাপরিচালকের আশ্বাসের পর এ আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

তিনি বলেন, শুক্রবারের মধ্যে আন্দোলন বন্ধ না হলে শনিবার থেকে আমরা লাগাতার কর্মবিরতিতে যাব। সে ক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের অন্য হাসপাতালও থাকবে।

পাল্টা কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবি সমূহ হচ্ছে- কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অ্যাডমিশন এবং পোস্ট অ্যাডমিশন ওয়ার্ডে আনসার সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশ দর্শনার্থী কার্ডের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, জরুরি ও ক্যাজুয়ালটি বিভাগকে কার্যকর করা, হাসপাতালের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং হাসপাতালের বেড সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে বেড সংখ্যা বাড়াতে হবে।

তবে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের একাংশের মুখপাত্র নাভিদ নাসিফ বলেন, আমাদের কর্মসূচি ছিল অহিংস। কিন্তু হাসপাতালের লোকজন পরিকল্পনা করে আমাদের ছাত্র ভাইদের বেদম মারধর করেছে। আমাদের হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে। বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা এখনো বলছি যতই হামলা করা হোক আন্দোলন থেকে পিছু হটবো না। স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার করতেই হবে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, অনশনরতদের ওপর হামলার ঘটনা সর্ম্পকে জানা নেই। দ্রুতই খোঁজ নিযে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ. কে. এম. মশিউল মুনীরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

এর আগে বুধবার (১৩ আগস্ট) বরিশাল সফরে আসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়া হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলন করে জনভোগান্তি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এ ঘোষণার একদিন পরেই আন্দোলনকারীদের ওপর হাসপাতালের কর্মচারীরা হামলা চালালেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত।

এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কথা বলেন এবং দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এরপর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বাধীন আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।



banner close
banner close