চট্টগ্রামের বাঁশখালী—সাগর ও পাহাড়ের মেলবন্ধনে গড়া এক অনন্য জনপদ। একদিকে বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত নীল জলরাশি, অন্যদিকে সবুজে মোড়া সুউচ্চ পাহাড়। পূর্বে রয়েছে পাহাড়, বৈলগাঁও চা-বাগান ও বাঁশখালী ইকোপার্ক, আর পশ্চিমে ঝাউবাগানঘেরা সমুদ্র সৈকত। এই বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহুদিন ধরেই পর্যটকদের টেনে আনছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাঁশখালী প্রধানসড়ক থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে চাম্বল ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি এলাকা নতুন এক বিড়ম্বনার শিকার। স্থানীয়রা যাকে আম্বাঘোনা, ছিবাজিল্লা ঝিরি, গৌরাণিতা ঝিরি ও বন্বিতার ঝিরি নামে চেনে, সেটিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ ‘বাঁশখালীর মিনি কাশ্মীর’ নামে প্রচার করছে। সম্প্রতি কিছু ইউটিউবার, টিকটক ব্যবহারকারী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর তরুণদের প্রচারণায় এ এলাকা ‘বাঁশখালীর মিনি কাশ্মীর’ নামে ভাইরাল হয়ে যায়। এর ফলে প্রতিদিন দলে দলে তরুণ-তরুণী ভিড় জমাচ্ছেন দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে। হুজুগে দর্শনার্থীদের প্রচারে এই এলাকা দ্রুত পরিচিতি পেলেও এর খেসারত দিচ্ছেন এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা।
ক্ষেতে পর্যটকের পা আর মাঠে হাতির দল, বিপাকে কৃষক: দূর্গম পাহাড়ি পথে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত সরু মাটির রাস্তার দুই পাশে সারি সারি সবজি ক্ষেত, কলা বাগান ও পানের বরজ। প্রতিদিন শত শত তরুণ-তরুণীর আনাগোনায় পদদলিত হচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি। জমির মালিকদের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে হতাশা ও ক্ষোভ। শুধু তাই নয়, মানুষের আনাগোনায় উত্তেজিত হয়ে বন্যহাতির দলও নেমে আসছে লোকালয়ে, তছনছ করছে ফসলি জমি। যা কৃষকের ক্ষতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক জসিম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন,
“আমরা পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ। ছনখোলা ও পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করেই হাজার হাজার পরিবার চলে। ‘মিনি কাশ্মীর’ নামে প্রচারের পর থেকে লোকজনের বেপরোয়া আসা-যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে আমাদের জমি, সবজি ক্ষেত। পাশাপাশি অনৈতিক মেলামেশা ও অপ্রীতিকর ঘটনাতেও আমরা বিব্রত। এ হুজুগ বন্ধ হোক।”
চুনতি অভয়ারণ্য রেঞ্জের জলদি বিট কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান শেখ বলেন, “আমাদের দেশে হুজুগে প্রবণতা বেশি। ছনখোলাকে মিনি কাশ্মীর বলে প্রচার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ে হাতির দলসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বসবাস। এভাবে মানুষের অবাধ বিচরণে বন্যপ্রাণীর চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমি সবাইকে এখানে আসার জন্য নিরুৎসাহিত করি।”
সচেতন মহল মনে করছে, বিনোদনের জন্য কৃষকের জমি নয়, বিকল্প পর্যটনকেন্দ্র বেছে নেওয়া উচিত। তারা বলছেন, পাহাড়ের নির্জন পাথরে আনন্দ খোঁজা যায়, কিন্তু শস্যভরা জমিতে নয়। সাজেক, নীলগিরি, বান্দরবান, রাঙামাটির মতো পর্যটনস্থল হতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের গন্তব্য। প্রকৃতি উপভোগ করুন, কিন্তু কৃষকের কান্না ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে বিনোদনের শিকার হতে দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন:








