শনিবার

২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ৪ পৌষ, ১৪৩২

আলিপুর বন্দরে ইলিশের প্রাচুর্য, আকাশছোঁয়া দামে নাগালের বাইরে মধ্যবিত্ত

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৩৪

আপডেট: ১৩ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৩৮

শেয়ার

আলিপুর বন্দরে ইলিশের প্রাচুর্য, আকাশছোঁয়া দামে নাগালের বাইরে মধ্যবিত্ত
ছবি বাংলা এডিশন

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলিপুর-মহিপুর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর। ভোরের আলো ফোটার আগেই এখানে শুরু হয় ব্যস্ততা। বঙ্গোপসাগর থেকে ফেরা ট্রলারভর্তি রুপালি ইলিশ নামানো হয় আড়তে, আর শুরু হয় হাঁকডাক, দর হাঁসাহাঁসি ও নিলামের প্রতিযোগিতা। ক্রেতা, পাইকার ও শ্রমিকদের কণ্ঠে মিশে থাকে সমুদ্রের লোনা গন্ধ। সকাল গড়ানোর আগেই লাখ লাখ টাকার মাছ হাতবদল হয়। তবে বাজারে পৌঁছতে পৌঁছতে সেই ইলিশের দাম চলে যায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

সকালে বন্দরে জমে ওঠে সরগরম পরিবেশ। প্রথমে আড়তগুলো ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়, এরপর ট্রলার থেকে নামানো হয় ঝকঝকে ইলিশ। সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে নিলামস্থল ভরে যায় শত শত পাইকারে। সম্প্রতি ‘এফবি আল্লাহর দোয়া’ নামের একটি ট্রলার ৬১ মণ ইলিশ নিয়ে বন্দরে আসে। আড়ত ‘খান ফিস’-এ ওই মাছ বিক্রি হয় ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৪ টাকায়। বড় সাইজের (৯০০–১০০০ গ্রাম) ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৭৩ হাজার টাকা, মাঝারি (৬০০–৮০০ গ্রাম) ৫৮ হাজার টাকা এবং ছোট (৪০০–৫০০ গ্রাম) ৪৪ হাজার টাকায়।

নিলাম শেষে শুরু হয় প্যাকেজিং প্রক্রিয়া। ধোঁয়া বরফে মাছ সংরক্ষণ করে ট্রাকে তোলা হয় এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। পরিবহন ও মধ্যবর্তী ধাপের অতিরিক্ত খরচ যোগ হওয়ায় বাজারে পৌঁছে দাম আরও বেড়ে যায়, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।

প্রতিদিন আলিপুর বন্দরে কয়েক শত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ কয়েক কিলোমিটার দূরে মহিপুরে সরকার-নির্মিত আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কার্যত অচল। ২০১২ সালে পরিকল্পনা, ২০১৬ সালে নির্মাণ সমাপ্তি এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের পরও সেখানে ব্যবসা জমেনি। মাত্র ৪০ জনের জন্য জায়গা ও ২০টি ট্রলারের ধারণক্ষমতা থাকায়, ৮২ ব্যবসায়ী, ২ হাজারের বেশি ট্রলার, ২০০ পাইকার ও ৮০০ শ্রমিকের চাপ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।

ফলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী নিজস্ব ঘাটে মাছ বিক্রি করছেন, এতে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরে আলিপুর ও মহিপুর মিলিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিপুর কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে আধুনিকায়ন এবং নিলাম প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল করলে রাজস্ব বৃদ্ধি ও বাজারে আংশিকভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে।

আলিপুরের ভোর থেকে শুরু হওয়া কর্মযজ্ঞ কেবল শ্রমিক ও পাইকারদের জীবিকার গল্প নয়; এটি দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের দাম, প্রাপ্যতা ও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার বাস্তবতাও স্পষ্ট করে তুলে ধরে। সাগরের ঢেউ পেরিয়ে যে রুপালি স্বপ্ন বন্দরে ভিড়ে, তা অনেকের জন্যই আজ কেবল দূর থেকে দেখার বিলাসিতা।



banner close
banner close