সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট সাদা পাথর এখন বিরাণভূমি। কোথাও আর পাথর নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাদা পাথর এলাকার বর্তমান পরিস্থিতির ছবি ভাইরাল হয়। তারপর থেকেই দেশজুড়ে চলছে সমালোচনা। গেলো বছর ৫ আগষ্টের পর পাথর লোট নিয়ে একাধিক পর্ব তুলে ধরে বাংলা এডিশর । এতে করে কিছুটা সময় পাথর লোট বন্ধ হলেও হঠাৎ একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মরুভুমিতে পরিনত হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর। সম্প্রতি সময়ে এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই সমালোচনা ও প্রতিবেদনকে তোয়াক্কা না করেই দেখা গেল শত শত ট্রাকে সাদা পাথর সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, দুপুরে ধোপাখোলা বাজার-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের দুপাশে প্রায় ১৫ কিমি পর্যন্ত বেশকিছু সংখ্যক ক্রাসার (পাথর চূর্ণ করার যন্ত্র) বসানো। এসব ক্রাসারে দিনভর ভোলাগঞ্জ থেকে আনা পাথর গুঁড়া করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে পাথর আমদানি করা হয়। সেইসব পাথরও এখানে জড়ো করে চূর্ণ করা হয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, আমদানিকৃত পাথরের সঙ্গে ভোলাগঞ্জ থেকে লুট করে আনা সাদা পাথর মেশানো হয়। পরে আমাদানির সেই চালানেই ট্রাকে করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান প্রতিবেদকে বলেন, সাদা পাথর লুটের ঘটনায় আমরা ১৭টি মামলা দায়ের করেছি। এতে ১৯১ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাতনাম আছে আরও ৩১০ জন। এরমধ্যে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। সাদা পাথর লুট হওয়া নিয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমরা চাই একটি পাথরও যেন লুট না হয়। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। গত চারদিন ধরে অভিযান চলমান।
মূলহোতাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যারা ঘটনাস্থলে পাথর লুটে জড়িত ছিল তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ফয়জুলসহ মূলহোতা কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘প্রশাসনকে আমি সাদা পাথর রক্ষায় ব্যর্থ বলব না। ব্যর্থতা তখনই হতো যখন চেষ্টা করত। সাদা পাথর রক্ষায় তো তারা কখনো চেষ্টাই করেনি। প্রশাসনের উদাসীনতাই সাদা পাথরের জন্য কাল হয়েছে। অথচ এক বছর আগেও সাদা পাথরে কেউ হাত দেওয়ার সাহস পায়নি।’
এসব বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সাদা পাথর রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু কোনোভাবেই পাথর লুট বন্ধ হচ্ছে না।’
আগে এটি রক্ষা করতে পারলেও এখন কেন পারছেন না প্রশ্ন করলে তিনি একই জবাব দেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।’
সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম বলেন, সাদা পাথরের লুটপাট নিয়ে সারা দেশে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এতে স্তুপ করে রাখা পাথরগুলো জব্দ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা তথ্য পেয়েছি আমদানিকৃত পাথরের সঙ্গে সাদা পাথরের ট্রাকের নিচে উপরে আমদানি করা পাথর মিশিয়ে শতশত ট্রাক ভরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। পাথরগুলো এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি যে পাথর লুটপাট হয়েছে সেগুলো অবিলম্বে জব্দ করা হোক এবং জব্দ করার সময় নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখা যাতে করে প্রকৃতচিত্র উঠে আসে। এর আগেও দেখা গেছে জব্দ নিয়েও শুভংকরের ফাঁকি, কারণ যারা লুটপাট করেছে তাদের কাছেই নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এই অপকর্ম বন্ধ করতে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ট্রাক ভর্তি হয়ে পাথর যাচ্ছে এই তথ্য পাচ্ছি কিন্ত অবাক বিষয় পাথর লুটের সময় পুলিশ, বিজিবির কোন তৎপরতা ছিল না। এখন আমদানি কৃত পাথরের সঙ্গে মিশিয়ে ট্রাকগুলোতে গোপনীয়ভাবে পাচার করা হচ্ছে সেগুলো আটকানোর কোন চেষ্টাও হচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তপনা সবাই মিলে করেছে।
আরও পড়ুন:








